পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

87 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আমাদের চোখের সামনেই ঘটে গেল। আমরা চোখ দিয়ে দেখলাম, আমাদের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে অনুভব করলাম এবং আমরা সবাই বহু ত্যাগের মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করে আবার নতুন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম। নতুন দিনের আশায় আমরা সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ উজ্জীবিত নতুন সংগ্রামে আমরা সমগ্র বাঙালী আজ শপথ গ্রহণ করেছি। এ সংগ্রাম আমাদের সুনিশ্চিত মুক্তি নিয়ে আসবে, এ সংগ্রাম বন্ধু, আমরা তো কোন অন্যায় করি নাই। বৃটিশ বেনিয়াদের উৎখাত করে এদেশে স্বাধীনতা গোখলে তাই একদিন বাঙালীকে লক্ষ্য করে এ যুগের একটি পরম সত্যবানী উচ্চারণ করেছিলেন What Bengal thinks today, Indian thinks tomorrow -অর্থাৎ বাঙালী আজ যা ভাবে, সারা ভারত তা চিন্তা করে আগামীকাল। রামমোহন, চিত্তরঞ্জন, রবীন্দ্রনাথ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, নেতাজী সুভাষ বসু, নজরুল ইসলাম এবং এই জাতীয় আরো বহু নাম উচ্চারণ করা যায় যাঁরা সারা ভারতীয় উপমহাদেশকে মানবতার শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন এবং স্বাধীনতার দীক্ষায় দীক্ষিত করেছেন। পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তিও ছিল বাংলাদেশ। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের ঢাকায়। ১৯৪০ সালে পাকিস্তান প্রস্তাব যিনি সারা বিশ্বের কাছে পেশ করেছিলেন তিনিও ছিলেন একজন বাঙালী-বাংলার নয়নমণি, বাংলার বাঘ ফজলুল হক। পাকিস্তান অর্জনের প্রাক্কালে পাঞ্জাবে এবং সিন্ধুতে মুসলিম লীগের বিরোধী মন্ত্রিসভা ছিলসীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তান চায় কিনা তা নির্ধারণ করতে হয় গণভোট নিয়ে। সারা পাকিস্তানে একমাত্র বাংলাদেশেই মুসলিম লীগ সরকার কায়েম ছিল। সুতরাং পাঞ্জাব ও সিন্ধু এবং সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি বহুলাংশে নিস্পৃহ ছিল-এ আন্দোলনে বলিষ্ঠ এবং অগ্রণী নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। বাঙালীর আন্দোলনেই পাকিস্তান এসেছে পাঞ্জাবীম সিন্ধী, বেলুচি বা পাঠানদের আন্দোলনে নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার সাথে সাথেই মাতব্বর হয়ে এলো পাঞ্জাবী, কি চাই? না লুটের মাল চাইএলো সিন্ধী, এলো পাঠান। কোথায় লুট করা যায়। আর কোথায়! সোনার বাংলায় সোনা ফলে। সুতরাং সবাই মিলে লুটের জন্য হাত বাড়ালো। কিন্তু লুট করতে গিয়ে দেখা গেল বাঙালীর সাধনা, বাঙালীর ঐতিহ্য, বাঙালীর সংস্কৃতি সব কিছু অত্যন্ত প্রদীপ্ত। সুতরাং শুরু হলো ষড়যন্ত্র। ধ্বংস, করতে হবে বাঙালীর আসল চেহারাকে। ইসলামকে সামনে রেখে পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে সামনে রেখে তাদের এই লুণ্ঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর দিনের পর দিন ষড়যন্ত্রেও জাল বিস্তারিত হতে থাকলো। প্রথম আঘাত এলো ভাষার ওপর তারপর অর্থনীতির ক্ষেত্রে, রাজনীতি ক্ষেত্রে, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। শুরু হলো শোষণের এক সুপরিকল্পিত আয়োজন, আরম্ভ হোল শাসনের এক নিদারুণ প্রয়াস। আমরা পাকিস্তান অর্জন করেছিলাম এবং প্রত্যেকটি বাঙালী পাকিস্তানের নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানের আদর্শকে বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করতে একান্ত নাগরিরে পরিণত করলো। কথায় কথায় আমরা যে পাকিস্তানের সত্যিকার নাগরিক সে ব্যাপারে তারা সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করলো-আমাদের আন্তরিকতা, আমাদের বিশ্বস্ত চেতনা সবকিছু পদদলিত করে আমাদের সবাইকে পর্দার সামনে থেকে পর্দার অন্তরালে নিয়ে যাবার সুপরিকল্পিত কাজ শুরু হোল। আর এই হোল পাকিস্তানের বিগত তেইশ বছরের ইতিহাস। বর্তমান শতাব্দীর নিমর্ম একটি ইতিকথা। (‘চেনাকণ্ঠ" ছদ্মনামে ডঃ মযহারুল ইসলাম রচিত) ১৬ জুন ১৯৭১ বাংলার প্রাণের নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হককে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থবাদীচক্রের মুখপাত্ররা ofan foot of ST-T fossil of Mr. Fazlul Hoq is self-confessed traitor ১৯৫৪ সালের