পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন। জয় বাংলা। (চেনাকণ্ঠ" ছদ্মনামে ডঃ মযহারুল ইসলাম রচিত) ২৩ জুলাই, ১৯৭১ পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকবর্গ তাদের বেতার ও অন্যান্য প্রচারকেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্বের নিকট দিন-রাত প্রচার করে চলেছে যে তাদের দখলীকৃত বাংলাদেশের অঞ্চলসমূহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। বিগত তিন মাসে জঙ্গী শাসকদের অমানুষিক কার্যকলাপ এবং সমগ্র প্রচারণা যে কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যাকে অবলম্বন করে অগ্রসর হয়েছে আমরা তা জানি এবং বিশ্বের নিকটও তা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের চীৎকার এবং ক্ৰন্দন এই বিশ্বাসঘাতকতা এবং মিথ্যা প্রচারণাই জুলন্ত দৃষ্টান্ত। মাসক্যারেনহাস নামক সানডে টাইমস’-এর একজন বিখ্যাত সাংবাদিক এই মাসের ১৩ তারিখে করাচী থেকে সপরিবারে লণ্ডনে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে বাঙালী জাতিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করবার সুপরিকল্পিত কার্যকলাপের একটি লোমহর্ষক এবং প্রামাণ্য বর্ণনা দিয়েছেন। সানডে টাইমস-এর জেনোসাইড বা একটি জাতিকে নির্মুল করা সম্পর্কে এই প্রামাণ্য তথ্য আজ ইউরোপ, আমেরিকা এবং প্রাচ্যজগতে একটি আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন কিভাবে শক্তসমর্থ যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে শরীর থেকে ধরছে এবং খেয়ালখুশিমত গুলি করে মারছে। তিনি দেখেছেন এই বর্বর পশুগুলো কিভাবে যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করছে। এবং এই জাতীয় আরো বহু চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। আর এই ঘটনাগুলো সবই বেশী দিন আগের নয়। মে মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের দিকে ঘটেছে। সুতরাং একদিকে মৃত্যুর নিষ্ঠুর লীলা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার সেনাবাহিনী, অন্যদিকে জঙ্গী সরকার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে যে অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পি-টি-আই পরিবেশিত আর একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার উল্লেখ করবো। কোন একটি শহরে শতাধিক নিরীহ লোককে বলা হয় যে, রেশনের দোকানে এলে তাদেরকে সাপ্তাহিক রেশন দেয়া হবে। লোকজন সরল বিশ্বাসে রেশনের দোকানে উপস্থিত হয়। তখন সেনাবাহিনী রেশনের দোকান খুলে দিয়ে সেই শতাধিক লোককে দ্রব্য নিয়ে দোকান থেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল তখন সৈন্যরা পেছন থেকে গুলি করে এবং শতাধিক লোককে সেখানেই হত্যা করে। এগুলো সবই বর্বরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার এক-একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর এই দৃষ্টান্তগুলো এখন সবই ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য বিদেশী পত্রিকাগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে মিথ্যা প্রচারণার তো অন্ত নেই। দেশবাসী সবাই জানেন যে এখনো ট্রেন পুরো চালু করা সম্ভব হয়নি- যে সব জায়গায় দিনে একটি কি দুটো মাত্র ট্রেন চালু হয়েছে সেখানেও বাঙালীদের উঠবার বিশেষ সুযোগ নেই। সড়কপথেও অনুরূপ অবস্থা। মফস্বল শহরগুলোতে লোকজন ফিরে আসতে ভরসা পাচ্ছে না, কেননা বহু ঘটনায় দেখা গেছে যে লোকজন ফিরে এলেই তাদের ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং সড়কপথে গাড়ি দু’এক স্থানে চালু হলেও লোকজন নেই। জলপথের অবস্থাও একই রকম। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে কিন্তু দু’একজন শিক্ষক কাজে যোগ দিলেও ছাত্র নেই- এবং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে হানাদার সৈন্যদের বিতাড়িত না করা পর্যন্ত কোন ছাত্র পড়াশুনা করতে যাবে না। অফিস-আদালতের অবস্থাও অন্যরূপ নয়। ঢাকার বেশকিছু পরিমাণ অফিস খোলা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার অফিসগুলো মফস্বল শহরগুলোর অফিসের ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু মফস্বল শহরে শতকরা আট-দশটির বেশী