পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২৭ জুন, ১৯৭১ ২৭ জুন, ১৯৭১ একজন মায়ের কথা বলছি। হ্যাঁ, একজন বাঙালী মায়ের কথাই বলতে চাইছি। মার্চ মাসে ইয়াহিয়ার সরকার বন্দুক-রাইফেল জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ জমাও দিয়েছিল। কিন্তু যে মায়ের কথা হাতে বন্দুক দেয়ার অর্থ মৃত্যুকে ডেকে আনা। মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা করবি না তোরা? বললেন তিনি। আমার মনে আছে, তিনি তাঁর তিন ছেলেকেই বললেন, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করো। হয় ইয়াহিয়ার সেনাদেরকে খতম করবে আর না হয় মরবে। ছেলেরা কথা রেখেছে। তাঁর এক ছেলে শহীদ হয়েছে। আর বাকী দুজন এখনও লড়ছে। গেরিলা আক্রমণে তারা দুজনেই সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছে। এই কিছুদিন আগে এদের দু’ভাইয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হলো। বললাম- তোমার মায়ের কথা বলো। বললে মা আছেন গাঁয়ে। তিনি তাঁর কাজ করছেন। সবাইকে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন, প্রেরণা যোগাচ্ছেন। বললে- মা কি বলেন জানেন আপনি? বলেন, মাকে আর দেশকে এক করে দেখবি। তোমরা আমার ছেলে নও, তোমরা বাংলাদেশের সন্তান- এই কথাটা মনে রেখো, ইয়াহিয়ার রক্তপিপাসু সেনারা আমার মতো বহু রত্নপ্ৰসবিনী মাতাকে হত্যা করেছে। আর এখন রতুগর্ভা বাংলাদেশকে হত্যা করছে। কিন্তু ওরা জানে না, একজন মাকে হত্যা করা যায় কিন্তু দেশকে হত্যা করা যায় না। বাংলাদেশকে হত্যা করা যায় না। যাবেও না। মাতা আর এমনি মা আমরা পেয়েছি লক্ষ লক্ষ, আর এমনি পুত্ৰও পেয়েছি লক্ষ লক্ষ। শেখ মুজিবের বাংলাদেশ আজ মরণ-পণ লড়াইয়ে ব্যস্ত। সমস্ত শোষিত নিপীড়িত জনগণ আজ জেগে উঠেছে, হাতে তুলে নিয়েছে তারা ওপর। আর ভয় নেই। মুক্তিফৌজির সামনে তিনটি প্রধান কর্তব্যঃ (এক) শত্রকে চূড়ান্ত আক্রমণ করতে হবে (দুই) শত্রর দালালদের খতম করতে হবে (তিন) কে শত্রু আর কে মিত্র তা চিনতে হবে। মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সর্বাপেক্ষা গৌরবময়। কারণগুলো কি? প্রথম কারণঃ পৃথিবীর কোনও মুক্তিযুদ্ধ এমন অভূতপূর্ব গণঐক্য দেখে নি। দ্বিতীয় কারণঃ পৃথিবীর কোনও মুক্তিযুদ্ধই যুদ্ধের শুরুতেই সশস্ত্র বাহিনীর এমন সমর্থন লাভ করেনি। স্মরণ করুন কিভাবে আমরা ই-পি-আর, ই-বি-আর পুলিশ, আনসার এবং মুজাহিদ ভাইদের সহযোগিতা পেয়েছি এবং এ মুহুর্তেও তারা কিভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। এমন কি ভিয়েতনামের যুদ্ধেও প্রথম দিকে এ ধরনের সশস্ত্র সমর্থন পাওয়া যায়নি, কাজেই সবদিক থেকে বিচার বিবেচনা করে বলা যায় আমরা সবাই একটি গৌরবময় মহান যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছি। মনে রাখতে হবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কারণসমূহ যথার্থ। আমরা লড়াই করছি ন্যায়ের জন্য এবং আমাদের লড়াইও যথার্থ পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে। কাজেই বিশ্বের সকল দেশ থেকে আমরা সমর্থন, সাহায্য ও সহানুভূতি পাবোই এবং পাচ্ছিও.... (অধ্যাপক আবদুল হাফিজ রচিত) ৯ জুলাই, ১৯৭১ মাঠে মারা গিয়েছে ইয়াহিয়া খানের লম্বা-চওড়া রেডিও গলাবাজি। শাহী কায়দায় ফরমান জারির ভঙ্গিতে কাকাতুয়া ইংরেজীতে আওড়ানো প্রায় একঘন্টার নরম গরম চরম বিলাপ আর প্রলাপ কি করে দাগ রাখবে