পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

94 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দাদী আর নানা-নানীর আদর কেড়ে বাংলার ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়। অথচ আজ! ভাবলে অবাক লাগে। এই তো সেদিন ঘুরছি আর ঘুরছি। হঠাৎ গিয়ে হাজির হলাম মুক্তিবাহিনীর শিবিরে। শান্ত নিরীহ বাঙালীর ছেলেরা দীপ্ত অগ্নিশিখার মত জুলছে। এক একটি ছেলে যেন জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভূত্য করে নিয়েছে। মায়ের আচল ছেড়ে, ঘরের নিশ্চিন্ত কোণ ছেড়ে, সামান্য সুখ আর আনন্দের পথ ত্যাগ করে বাংলাদেশের ছেলেরা এই প্রথম অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। পার্থক্যটা অনুভব না করে উপায় নেই। আমিও না করে পারিনি। বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু বন্ধ নেই মুক্তিবাহিনীর স্কুল-কলেজ। তা সব সময়ই খোলা। এমনি একটি মুক্তিবাহিনীর শিবিরে গেলাম সেদিন। সোনার টুকরো হীরের টুকরো সব ছেলেরা লড়াইয়ে যাবে তাই তৈরী হচ্ছে। বললাম, কেমন আছো ভাইরা আমার? কেমন আছো? সবাই বললে ভালো আছি। বললেঃ আমাদের বিপ্লবী সেলাম নিন। ওদের সঙ্গে কথা বললাম। পেয়ালা পেয়ালা চা খেলাম। একজন বললেঃ আমরা এখন লড়াই করতে যাচ্ছি। বললাম- সে কি? এক্ষুনি? হ্যাঁ এক্ষুনি। প্রথমে অবশ্য বুঝতে পারিনি। পরে বুঝেছিলাম। অস্ত্রে ওরা দীক্ষিত হচ্ছে- অস্ত্রে ওরা শাণ দিচ্ছে। ওদের সমস্ত মাংসপেশীগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে, ওরা পায়ের তালে তালে মার্চ করছে- ওরা তৈরি হচ্ছে, লড়াই করতে যাচ্ছে। বাংলার সন্তান মুক্তিযুদ্ধে লড়ছে, শক্র নিকেশ করছে। পার্থক্যটা সত্যিই ভুলবার মত নয়। মায়ের আদূরে বেগ। ওদের একজন বললে-দেখবেন লড়াইটা। বলার অপেক্ষা মাত্র। সঙ্গে সঙ্গে ওরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একদল মুক্তিবাহিনী আর একদল পাক-সেনা শুরু হল লড়াই। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী হেরে গেল। আমি হাততালি দিয়ে ওদের অভ্যর্থনা জানালাম। এরপর ওরা গেরিলাযুদ্ধের কলাকৌশল দেখালো। আর একবার হাততালি দিয়ে ওদেরকে অভিনন্দন জানালাম। ওদের অবসর ওরা এমনি করে কাটায়। আনন্দের মধ্যে শিক্ষা আর শিক্ষার মধ্যে আনন্দ। মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা এভাবে তৈরী হচ্ছে। ইয়াহিয়ার খুনী সেনাবাহিনীর কবর রচিত হবে অচিরে। (অধ্যাপক আবদুল হাফিজ রচিত) ১৯ জুলাই, ১৯৭১ কবি শহীদ সাবের আজ আর নেই- কিন্তু তার কবিতা আছে। সেই কবিতাটিই পড়ছিলাম। গত মহাযুদ্ধের সময় ফ্যাসিস্ট জার্মান বাহিনী যেভাবে গেরিলাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল- সেসব কথা মনে পড়েছিলো শহীদ সাবেরের। সাবেরের মনে তৈরি হচ্ছিল বিদ্যুতের-জন্ম হচ্ছিল একটি কবিতার- আর সে কবিতা মুহুর্তে মনকে আক্রান্ত করে। কবিতাটি পড়ছিলাম। শহীদ সাবের আজ আর নেই। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার বর্বর সেনাবাহিনী হত্যা করেছে শহীদ সাবেরকে হত্যা বলবো, না অন্য কিছু? শহীদ থাকতেন ঢাকার দৈনিক পত্রিকা ‘সংবাদ’-এর কার্যালয়ে আগুনে-বোমা ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হল সংবাদ কার্যালয়। তাঁরই সঙ্গে পুড়ে গেলেন শহীদ সাবেরযে শহীদ সাবের ছিলেন ফ্যাসি-বিরোধী, যে শহীদ ছিলেন মুক্ত মানবতার প্রতীক। ইয়াহিয়ার খুনী সেনাবাহিনী শুধু অধ্যাপক হত্যাই করেনি। কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী কেউ বাদ যায়নি। শহীদ সাবের নেই- কিন্তু আছে তাঁর কবিতা। কবিতাটির একটি ভূমিকা লিখেছিলেন সরদার ফজলুল করিম। লিখেছিলেনঃ কিশোর শহীদ সাবের আমারই ন্যায় জেল থেকে জেলান্তরিত হতে হতে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে এসে আমার সঙ্গে দৈবক্রমে মিলিত হয়েছিলেন। রাজশাহীর সাঁওতাল কৃষকদের আত্মপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন পূর্ববাংলার