পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

100 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এখন উপায়? উপায় খুঁজে বের করেছে বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণিত নায়ক, বুদ্ধিবিবেক বর্জিত সেনাপতি ইয়াহিয়া খান। খবরের কাগজে প্রকাশিত হলো বিবৃতি, সর্ব অসত্যের ভাণ্ডার রেডিও পাকিস্তান থেকে ক্ষণে গৃহহীন আশ্রয়হীন সংসারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, একটু আশ্রয়, একটু নিরাপত্তার অভিপ্ৰায়ে। দরদবিগলিত কণ্ঠে পরম বন্ধুর মতো আহবান এলো- ‘আয়, ওরে আয় ঘর ছেড়ে যারা গেছিস তারা আয়। তোদের সব আছে, তোদের সব দেবো। কিন্তু বাংলার মানুষ দুর্জনের আশ্বাসে ভুলল না। কেননা তারা জানে, ‘খলের ছলের অভাব হয় না। একবার তারা আঘাত পেয়েছে, বহু কষ্টে বুকের পাথর চাপা দিয়ে ভুলে আছে মা বোন ভাই আত্মীয়স্বজনের হত্যার কাহিনী। তারা চায় নায় আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। ইয়াহিয়ার তাঁবেদাররা বলল, ‘সংবর্ধনা শিবিরগুলি ফেরত-উদ্বাস্তুদের দ্বারা ভেঙ্গে গেছে।” সংগে সংগে ইংল্যাণ্ডের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো, সংবর্ধনা সভায় একটি লোকও দেখলাম না। দুর্জনদের মিথ্যা উক্তির প্রমাণটি লক্ষ্য করুন। যারা মানুষকে ঘরছাড়া করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে, বাঙালীকে হত্যা করে সংখ্যাসমতা আনতে চাইছে- তাদের কোন আশ্বাস কি সংগ্রামী মানুষ সুস্থ মানুষের উক্তি বলে গ্রহণ করতে পারে?... শুধু এই নয়, আরো আছে। ইয়াহিয়া নির্বাচনের দিন ও তারিখ ঘোষণা করেছে। ভাবখানা এই, নিজের মুরগী যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে কাটব’। কিন্তু সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার, ভাগ্য, ধ্যান-ধারণা তো সস্তা বা মূল্যহীন নয়। ইয়াহিয়া খান অনুভব করেছে এতদিনে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, জনপ্রিয় অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের সদস্যদের দেশদ্রোহী বলে ফরমান জারি করা হলো। আবার সেই ব্যক্তি যে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো, সে দলেরই নির্বাচিত কতিপয় সদস্যদের আবার বৈধ বলে মেনে নিলো। প্রবঞ্চক প্রবঞ্চনার পথ বেছে নিলো। বাতিলকৃত সদস্যপদ আবার নির্বাচন হবে। এ যেন ছেলের হাতের মোয়া। সামরিক শক্তির বলে গণমানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা যেন ছেলেখেলা ব্যাপার। শুধু তাই না, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিনিধি নির্বাচিতও হয়ে যাচ্ছে। আর আশ্চর্য, আওয়ামী লীগের সংগে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, খেলা আর বলে কাকে? মনগড়া হিসেবে বিশ্বকে ভাঁওতা দেয়ার যে পথ বেছে নিয়েছিল ইয়াহিয়া খান, আজ তা নিদারুণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত। বাংলার মানুষ আজ তার জবাব দিচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং বারবার।... (মুস্তাফিজুর রহমান রচিত) ৭ নভেম্বর, ১৯৭১ জল্লাদ বাহিনীর মৃত অফিসারদের জন্য কাটের বাক্স তৈরী করা হচ্ছে এবং সেটা হচ্ছে ব্যাপকহারে। বেচারা কাঠমিস্ত্রীর শান্তি বা স্বস্তি নেই। দিন-রাত তার কাজ-বাক্স বানাও। মরা লাশগুলোকে জলদি পাঠাও নিজের দেশের মাটিতে। কারণ? কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, বাংলার মানুষ যেন বুঝতে না পারে যে বর্বরবাহিনীর অফিসাগুলোর একে একে লোপাট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়, বাংলার মাটিতে ওদের ঠাঁই নাই। কেননা ওরা বাংলার নয়। বাংলার মাটির এতোটুকু দরদ নেই ওদের জন্য। বাংলা শুধু বাংলাদেশের জনগনের। এখানের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কৃষ্টি সব এদেশেরই। এসবই বেড়ে উঠেছে সবুজ কোমল লতার মতো ংলার মাটি থেকে। তাই এ মাটিতে কি ঠাই পেতে পারে যারা বাঙালী বিদ্বেষী, যারা বাংলার পয়লা নম্বরের দুশমন? কখনোই না।