পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আত্মত্যাগ ও মৃত্যুর মাধ্যমে ভবিষ্যত বংশধরদের সত্যিকার মানুষের মত বাঁচবার একটি স্থান, একটি পথ আমরা আজ তৈরি করে যাচ্ছি। যে মহৎ কারণের জন্য জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে, অনেক অভাব ও দীনতাকে হাসিমুখে বরণ করে এবং দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের সকল ছোবলকে দু’পায়ে দলিতমথিত করে আজ বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন, তার মূল্য মানুষের ভাষায় নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই মহান কারণ ও সংগ্রামের উজ্জ্বলতম আদর্শ শুধু বাংলাদেশের নয়, ভবিষ্যতে সমস্ত বিশ্বের সমাজ গঠনে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বাঙালী জাতি হিসাবে আমরা যে সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে এই একট অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সমর্থ হয়েছি, তা কম গৌরবের কথা নয়।. এটা অত্যন্ত আশার কথা যে বিশ্ববিবেকের ক্ষেত্রে আজ আশানুরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন সকল মানুষ আজ উপলব্ধি করেছেন যে, আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে। অবশ্য বাংলাদেশের মানবতার যে অপমান সংঘটিত হয়েছে, মানবতার ইতিহাসে তুলনা হয় না। আর এই লাঞ্ছিত মানবতাকে রক্ষার জন্য সভ্যতাগবী উন্নত দেশগুলো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবেন, আমরা গোড়া থেকেই এমন আশা করেছিলাম। সে আশা আমাদের সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে একথা আমরা বলতে পারবো না। ভূমিকা আমাদের সম্পূর্ণ নিরাশ করেছে। বিশ্বের জনগণ আমদের সাথে আছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও আমদের সংগ্রামকে সমর্থন করেন। এ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্রই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম মোটামুটি একটি সহানুভূতি লাভে সমর্থ সপক্ষে আরো জাগ্রত হবে। আমরা একথা জানি,স্বাধীনতা কোনদিন শুধুমাত্র অপরের সাহায্যে আসে নাসংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষা করতে হবে। আম তাই আজ দিকে দিকে সংগ্রামের এমন দুষ্কর যাত্রাপথকে বেছে নিয়েছি। আর এই সংগ্রামই আমাদেরকে বিজয়ের পথে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। মুক্তিবাহিনীর জয়পতাকার ছায়া আজ বাংলা সমস্ত অঞ্চলে অঞ্চলে সবুজ ঘাসের ওপর বিপুল এক শুভাবহ মায়ার প্রলেপের মত বিস্তারিত হচ্ছে। সেদিন আর অধিক দূরে নয় যখন এই বিজয়-কেতনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমরা জাগ্রত সাড়ে সাত কোটি বাঙালী কবি নজরুলের কণ্ঠে কণ্ঠে মিলিয়ে গভীর প্রত্যয় জননী জন্মভূমি বাংলাদেশকেও প্ৰণতি জানাবোঃ নমঃ ননঃ বাংলাদেশ মম চির মনোরম চির মধুর বুকে নিরবধি বহে শত নদী চরণে জলধির বাজে নূপুর। (ডঃ মযহারুল ইসলাম রচিত)