পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কিন্তু কেন? পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর এই আচরণের, ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার এত খায়েশ কেন? বিশ্ববাসী জানেন ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ কোন বিরোধ নেই। আসলে সংঘাত চলেছে, যুদ্ধ চলেছে শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ এবং উপনিবেশবাদী পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর মধ্যে। রক্তপাত, বর্বরতা, লুটতরাজ, নির্যাতন চলছে বাংলার মাটিতে-এসব করেছে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া ডালকুত্তার দল। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে অমিতবিক্রমে লড়ে চলেছে হানাদার দিচ্ছে বাংলাদেশের জনপদ। স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে জল্লাদ ইয়াহিয়া খান। লিপ্ত হয়েছে তার বিচার প্রহসনে। তাই সমগ্র বিরোধটা, মূল সংঘর্ষটা চলেছে বাংলাদেশের জনগণ আর পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। এর মধ্যে ভারতের স্থান কোথায়? ভারতের কথা আসে কিসে? কিন্তু তবু গোড়া থেকেই জঙ্গীশাহী চেষ্টা করে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি বেমালুম চাপা দিয়ে বিশ্ববাসীকে এই মর্মে বিভ্রান্ত করতে যে সংঘর্ষটা আসলে পাকিস্তন ও ভারতের মধ্যে। এর উদ্দেশ্যেও পরিষ্কার। জঙ্গীশাহী চাইছে পাক-ভারত সংঘর্ষের ডামাডোলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ইয়াহিয়া চাইছে বাংলাদেশ ইসু থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কল্পিত পাক-ভারত বিরোধের দিকে সরিয়ে নিতে। আর সে কারণেই তেহরানের দুয়ারে ধর্না। ২২শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ খবরের পর খবর। নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ সম্পকে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকারী ২৫টি দেশ একবাক্যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি সংগ্রামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিনাশর্তে মুক্তি দাবী করেছে। গত সোমবার সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে স্বাধীন বাংলাদেশেকে জানানো হয়। ভারতের সর্বোদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দান বন্ধ করা এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত সমুদয় সাহায্য সামগ্ৰী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিলি-বন্টনের ব্যবস্থা করারও দাবী জানানো হয়। এদিকে কুয়ালালামপুর অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনে বাংলাদেশে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর গণহত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা করে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের দাবী জানানো হয়েছে। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি দাবী করে বলা হয়েছে, তার মত কালজয়ী নেতাকে আটক রাখা গৰ্হিত অন্যায়। আফগানের বাদশাহ জহির শাহের মস্কো সফরশেষে প্রকাশিত সোভিয়েতআফগান যুক্ত ইশতেহারেও বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি, বাংলাদেশে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদসু্যদের বর্বর গণহত্যাযজ্ঞের নীরব দর্শক জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উ থান্ট শেষ পর্যন্ত বিবেকের তাড়নায় বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, মানবিক মূল্যবোধের মর্যাদাপূর্ন স্বীকৃতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই বাংলাদেশের মূল সমস্যার সমাধান সম্ভবপর। তিনি একথাও বলেছেন যে, বাঙালী জাতিকে সর্বপ্রকার সাহায্য করা বিশ্ববাসীকে নৈতিক দায়িত্ব। এদিকে, ফ্রান্সের বিশিষ্ট লেখক, রাজনীতিক ও প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মসিয়ে আদ্রে মালরো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে হানাদার দসু্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করে দেশ