পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

114 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বিদেশের বহু তরুণ তার কাছে চিঠি লিখেছে। এই খবর পরিবেশনাকারী একটি পত্রিকার ভায়ায় “আজ ংলার মুক্তিসংগ্রামের কার আগে প্রাণ, কে করিবে দান, তারি লাগি কাড়াকড়ি” পড়ে গেছে। বলা বাহুল্য, উল্লেখিত সবকটি খবরই বাঙালী জাতির জন্য শুভ সংবাদ। কারণ, এতে একদিকে যেমন বাঙালী জাতির মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে দুনিয়ার মানুষ জল্লাদ ইয়াহিয়ার কথা বিশ্বাস করেনি। বরং পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের কাছে অস্ত হীন ঘৃণা আর ধিক্কার ছাড়া তার আশা করবার আর কিছুই নেই।. ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ একটি বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, লণ্ডনে এই মর্মে জোর জল্পনা-কল্পনা চলেছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি আসন্ন। কোন কোন পর্যবেক্ষকের মতে, বাংলাদেশ সম্পকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আলোচনার আগেই শেখ সাহেবকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। লণ্ডনে পাকিস্তানী অনুচররা এই মর্মে প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে যে, শেখ মুজিবের কোন দোষ নেই। শুধুমাত্র চরমপন্থীরা দেশদ্রোহী কার্যকলাপের জন্য দায়ী। আর একই দরুন ২৫শে মার্চ পাক ফৌজকে অস্ত্র হাতে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। এদিকে করাচী থেকে ফরাসী বার্তা সংস্থা এ-এফ-পি জানিয়েছে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেগম মুজিবকে লয়ালপুরের কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে দিতে পারে। রাওয়ালপিণ্ডির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন তার বৃদ্ধ পিতা এবং বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে পারে। বলা হয়েছে যে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার সে ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। পিণ্ডির পত্র-পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়েছে যে, শেখ মুজিবের বিচারের রায় আগামী সপ্তাহেই দেওয়া হবে বলে মনে হয়। জল্লাদ ইয়াহিয়া খেলাটা ভালো জমিয়ে তুলেছে। উপরের খবরগুলো একটু তলিয়ে দেখলেই পরিষ্কারভাগে বুঝতে পারা যায় যে এর পেছনে রয়েছে ইয়াহিয়ার এক সুচতুর চাল। এই ক'দিন আগেও জেনারেল ইয়াহিয়া খান “লা ফিগারো’ পত্রিকায় প্রতিনিধির কাছে সদস্তে বলেছে যে, শেখ মুজিব কোথায় আছে তা তার জানা নেই। কারণ, কারারুদ্ধ ক্রিমিনালদের কে কোথায় আছে তা-একটা দেশের প্রেসিডেন্টের জানা থাকবার কথা নয়। আজ সেই ইয়াহিয়া খানের সরকারই দয়ায় বিগলিত শেখ মুজিবের পত্নীকে তার এমনকি জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রশ্নে বির্তক শুরু হবার আগেই বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেবে-এতসব খবরে এখন বাজার মাত শুধু কি তাই, একদিকে ইয়াহিয়া খান নিজেই বলেছে শেখ মুজিব রাষ্ট্রদ্রোহী ক্রিমিনাল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দায়ে তার হচ্ছে বিচারের নাম প্রহসন- আবার অপরদিকে জেনারেল আসলে ভালো মানুষ। তার কোন দোষ নেই। ইয়াহিয়া খান “লা-ফিগারোকে বলেছে, শেখ মুজিবকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দাবী করিয়েছে। ইয়াহিয়ার অনুচরেরা বলছে, চরমপন্থীরাই দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডের গুরুঠাকুর।’ কিন্তু ঘটনাটা কি? আমরা বরাবরই বলেছি, শেখ মুজিবের জীবন এবং তার নিরাপত্তাকে ইয়াহিয়া খান ব্যবহার করতে চাইছে শেষ রক্ষার তুরুপের তাস হিসাবে। তাই সে এদিকে শেখ মুজিবের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে, অপরদিকে গোপনে দূত পাঠিয়ে তারই কাছে দিচ্ছে আপসের ধর্না। ... তারই অনুসারীদের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে জঙ্গশাহী আর তার চেলা-চামুণ্ডারা জনমনে বিভ্রান্তি এবং বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ইয়াহিয়া