পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

115 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড খান জানে যে, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ শেখ মুজিবের নির্দেশিত থেরই অভিযাত্রিক মাত্র। তবু এই বিভেদ-প্রচার নীতি অনুসরণ করছে তারা নিজেদের দুরভিসন্ধি হাসিলের জন্যই। ১লা অক্টোবর, ১৯৭১ জাতিসংঘ সদর দফতর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেবার জন্য পাকিস্তান জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল মিঃ উথান্টের কাছে আবেদন জানিয়েছে। রেডিও পাকিস্তানের খবরে বলা হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানী প্রতিনিধি আগা শাহী উথান্টের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ আবেদন জানিয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয় যে, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য জনাব এম, আর, সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গুরুতর ক্রিমিনাল’ অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে জনাব সিদ্দিকী এবং প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের নিউইয়র্কে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও আবেদন করা হয়েছে। ব্যাপারটাকে কি বলা যায়! পাকিস্তান যে ফরিয়াদ জানিয়েছে তাকে মামা বাড়ির আবদার বললেও খাটো করে বলা হয়। একটি স্বাধীন দেশের জনগণের আস্থাভাজন প্রতিনিধিদের বিশ্বসংস্থায় মাতৃভূমির বক্তব্য পেশে বাধা সৃষ্টিকল্পে উপনিবেশবাদী জঙ্গীশাহীর এই নির্লজ্জ অপচেষ্টাকে কলঙ্কজনক তস্করবৃত্তি আখ্যা দিলেও যথেষ্ট বলা হয় না, কিন্তু তবু ঘটনা সত্য যে পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বক্তব্য পেশে বাধা সৃষ্টির ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে। এমনকি জাতিসংঘ লবিতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যাতে স্বীয় বক্তব্য পেশ করতে না পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা মঞ্জর বন্ধ করার চেষ্টাও পাকিস্তান করেছে। পাকিস্তানের এই অপচেষ্টার দরুনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লাভে বিলম্ব হয়েছে এবং তার ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নিউইয়র্ক পৌছতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন এবং ইতিমধ্যেই তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করেছে। সকলেই জানেন, ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং লণ্ডনে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল নিউইয়ক গিয়েছেন বিশ্ব সংস্থার সদস্যদের কাছে জননী বাংলার বুকে জল্লাদ ইয়াহিয় ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনীর বর্বর অত্যাচার ও নজিরবিহীন গণহত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করতে। তাঁরা গিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতিদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারামুক্তির জন্য উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্ব রাষ্ট্রবর্গকে অগ্রণী করতে। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর প্রতিনিধি হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যারা জাতিসংঘে গিয়েছেন তারা জনগনের আস্থভাজন-সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী এবং কূটনীতিক। সততা ও দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ খাঁটি সোনা তারা। তাদের কণ্ঠস্বর বাঙালী জাতির কণ্ঠস্বর বলেই বিবেচিত হবে। তাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন হানাদার বর্বর উপনিবেশবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জীবনপণ মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত একটি দুর্বিনীত জাগ্রত জাতির। অপরদিকে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলটি গঠিত হয়েছে গণধিকৃত রাজনৈতিক মৃত সৈনিকদের নিয়ে। সকলের পরিচয় দিয়ে কাজ নেই। শুধুমাত্র দুই নেতা-বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী এবং পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা পেশাদার দালাল মাহমুদ আলির দিকে তাকালেই দুটি প্রতিনিধিদলের মধ্যকার পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, বিশ্বাবাসী জানেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের-পাঞ্জাবী কুচক্রের জারজ সন্তান মাহমুদ আলিদের নয়। তাই একথাও পরিষ্কার যে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বক্তব্যকেই বিশ্ববাসী চূড়ান্ত