পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড করে মৃত্যুর দিনটিগোনার জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। মেজর জেঃ রাও ফরমান আলীর সব আবেদন ব্যর্থ হয়ে গেছে। ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশ’ বারবার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসংবরণ করে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আর তা না হলে চরম বিপর্যয়ের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেনে। ঢাকা নগরীর ওপর গত রাত থেকে চরম আঘাত হানা শুরু হয়েছে। জেনারেল নিয়াজী সত্যকে গোপন করার জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ বা উদ্ধারের পক্ষে সমর্থন জানায়নি। কারণ, উদ্ধারপ্রাপ্ত জীবিত এই সেনাবাহিনী দেশের মাটিতে অর্থাৎ পাকস্তানে ফিরে গেলে সেটা হবে জঙ্গীশাহীর পক্ষে আত্মহত্যার শ্যামিল। বাংলাদেশের সংগ্রামের সামগ্রিক রূপটি উদঘাটিত হয়ে যাবে। আপামর জনসাধারণের কাছে এবং পাকিস্তানের জনসাধারণ এটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে যে, তাদেরই বাপ-ভাই-ছেলে বাংলদেশে জঙ্গশাহীর পরিচালিত অন্যায় যুদ্ধের জন্যই মারা গেছে। তাদের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কাছে গ্লানিকর মৃত্যু। তার ফলে হবে মারাত্মক। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ পাকিস্তানে বিদেশী সংবাদপত্রের প্রবেশ নিষেধ, আকাশবাণী এবং বি-বি-সি শোনা নিষিদ্ধ। আর এদিকে যাদের ভরসা দিয়ে শক্তির অহমিকা দেখিয়ে একটি অবাস্তব পুতুল সরকার গড়ে তুলল, তাদেরও স্বস্তি নেই। চিরকালের মিথ্যাবাদী, উগ্ৰমস্তিষ্ক ভুট্টোকে তথাকথিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে পাঠানো হলো জাতিসংঘে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! সেই উগ্ৰমস্তিষ্কের মাথা এখন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, মিথ্যাবাদীর মুখ দিয়ে সত্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এতদিনে ভূট্টো স্বীকার করেছে তারা ভুল করেছে এবং ভুট্টোর স্বভাবসিদ্ধ নীতিমাফিক সামরিক জান্তাকে দোষরোপ শুরু করেছে-অন্যায়ের সমস্ত ঝক্কি এখন ঠেলে দিচ্ছে সামরিক জান্তার উপর। পুতুল সরকারের লোভী, ক্ষমতালি সু পালের গোদটির যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশের অবস্থায় পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক। জঙ্গীশাহীর ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করে একটি বালির প্রাসাদ গড়ে তুলেছিল চিরদিনের বাংলার জাতশত্র পাক দালাল ডাঃ মালিক। পাকিস্তানী সুবেদারের দায়িত্বভাবে গ্রহণ করে তাঁতের মাকুর মত নিয়াজী এবং ফরমান আলী যাতয়াত করেছিলেন, ঠিক কখনই কলজের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানলো মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনী। চৈত্যন্যোদয় হলো বাংলার কলংক, জঙ্গীশাহীর পদলেহী তথাকথিত পাকিস্তানী সুবেদার ডাঃ মালিকের। চোখ থেকে এতদিনে গ্যালন গ্যালন জল ঝরতে শুরু করেছে। ঢাকার গভর্নর হাউসের উপর বোমা এবং কামানোর গোলা নিক্ষেপের সংগে সংগে সন্দেহাতীভাবে পাক প্রতিরোধের পতন অনুধাবন করেছেন ডাঃ মালিক। আন্তর্জাতিক রেডচক্র সোসাইটির একটি খবরে প্রকাশ, ডাঃ মালিক কাঁপা কাঁপা হাতে তাঁর এবং মন্ত্রী পরিষদের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন। আজ জীবনের শেষপ্রান্তে ডাঃ মালিক নিডের জীবনের চুলচেরা হিসেব করে দেখছেন। গভর্নর হাউসের বাংকারও আজ নিরাপদ নয়। তাই অতি মূল্যবান নিজের প্রাণটি বাঁচানোর জন্য স্ত্রীকন্যার হাত ধরে ঢাকা নগরীর নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। গতকাল অর্ধমৃত অবস্থায় পুলিশের প্রধান এম, এম, চৌধুরী উচ্চপদস্থ আরো ১৬ জন সরকারী কর্মচারীকে নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ডাঃ মালিক সপরিবারে আশ্রয় পেয়েছেন অবশ্য। আসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা একেবারে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত।