পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ঢাকা নগরী মিত্রবাহিনীর এবং মুক্তিবাহিনীর পদানত না হওয়া পর্যন্ত ডাঃ মালিক সপরিষদ আইউব পাকিস্তানী বাহিনীর সর্বশেষ এবং সূদৃঢ় প্রতিরোধ যে বিপর্যস্ত এবং পতনের মুখে, এটা আজ দিনের আলোর মতোই সুস্পষ্ট। এখন পাকিস্তানী বাহিনীর সম্মুখে দুটি পথ-একটি জেনারেল মানেকশ’র আহবান আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করা, আর তা না হলে মৃত্যুকে শ্রেয় জেনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। মানুষের মুখ * ১৬ জুন, ১৯৭১ এক টুকরো রুটি সময় ; উনিশ শ একাত্তের সনের ২৭শে মার্চ স্থানঃ চট্টগ্রামের কোন উপকণ্ঠ। পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে উঠেছে শহরে, বন্দরে, গ্রামে। দানবের সাথে সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হয়েছে ঘরে ঘরে আমাদের মুক্তিবাহিনী। সীমান্তে থেকে ছুটে এসেছে ই-পি -আর এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানরা। দলে দলে ওরা এসেছে রামগড়া রাঙামাটি আসলং কিংবা হরিণা থেকে। শ্রান্ত, ক্লান্ত অথচ উদ্দীপ্ত ঐ জওয়ানদের অন্তত একরাত্রির আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর কাল ভোর থেকে ওরা অবরোধ শুরু করবে ক্যান্টনমেন্টে। সুতরাং যত শীঘ্র সম্ভব ঐ দেড়শ জওয়ানের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা প্রয়োজন। না, অসুবিধা মোটেই হল না। থাকার ব্যবস্থার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দেয়া হল। খাবারের কথা গ্রামে পৌঁছতেই বাড়ি বাড়ি থেকে গরম ভাত-তরকারি চলে এল। মাত্র একঘণ্টার মধ্যেই নবাগত মেহমানদের জন্যে স্বতঃস্ফূর্ত খাবার এল অঢেল পরিমাণে। যুদ্ধের সময়ে খাদ্য সরবরাহ একটি গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার। স্থানীয় যুবকবৃন্দ এ বিষয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে একটি কমিটি করে ফেললেন। খবর এল, রাতেই আরও নতুন জওয়ান পৌছে যাবে ওখানে। মোট আড়াই শ’ লোকের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে। জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা থাকলেও নিয়মিত কার্যসূচী চালিয়ে যাওয়া নিতান্ত সাধারণ কথা নয়। ভোর বেলাতেই বস্তা বস্তা চাল এসে পৌছলো মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় দফতরে। গ্রামের একজন অবস্থাপন্ন ভদ্রলোক দু’টো দশাসই ছাগল নিয়ে এলেন। ওগুলো যুদ্ধকর্মীর হাতে তুলে দিতে বললেন, আগমী ঈদে কোরবানী দেব ভেবেছিলাম। সে সুযোগ আর জীবনে আসবে কিনা জানি না। ছাগল দুটো দিয়েই খালাস পেলাম ভাববেন না। প্রয়োজন হলে নিজেকেও কোরবানী দিতে কসুর করব না। শুধু চাল আর ছাগল নয়। আরও এল তরিতরকারি, লাউ-কুমড়ো, গুড়ো মশলা ইত্যাদি। অনেকে পাক করে আনলেন ভাজা কিংবা সেদ্ধ ডিম। সেসব যথাযথভাবে রাখতে হিমশিম খেয়ে উঠলেন তিরিশজন কর্মী।

  • মানুষের মুখ’ শীর্ষক ধারাবাহিক কথিকাগুলি কামাল মাহবুব’ ছদ্মনামে মাহবুব তালুকদার রচিত।