পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শান্ত ধীর কণ্ঠে স্বাতী বলেছিল, তাহলে পেলেন বসে আমরা মেশিনগান দিয়ে ওদের মারতাম। আমাদের অনেক বন্দুক থাকলে মিলিটারীরা আমাদের সাথে পারত না। হ্যাঁ মা-ওর আবু বলেছিলেন, আমদের হীরের টুকরো ছেলেরা সব অশ্বমেধের বলী হয়ে গ্যালো। অস্ত্র হাতে থাকলে তা হতো না। স্বাতী কি বুঝেছিলে কে জানে! আব্দুর হাত ধরে ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বলেছিল, ওরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারবে না। ওর আব্দুকে উত্তর দিতে হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে এর উত্তর লিখেছে রাঙ্গামাটির প্রান্তরে। সত্যি, ওরা আমাদের সাথে যুদ্ধ করে পারবে না। জল্লাদ বাহিনীর কয়েক লক্ষ নিয়মিত সৈন্য ছাড়া আর কি আছে? হৃদয়হীন পাশব শক্তির উল্লাস ছাড়া ওদের অস্ত্রের আর কোন ভাষা নেই। আর বাংলার মাটির দুর্বার ঘাঁটিতে প্রত্যেকে সৈনিক আজ, প্রত্যেকে সৈনিক’। ওরা কি করে এ যুদ্ধে জিতবে? আমাদের মুক্তিফৌজের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাড়ে পাঁচ বছরের স্বাতী সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে। ওরা কি করে এ যুদ্ধে জিতবে? স্বাতী কেবল একটি মেয়ের নাম নয়, এদেশের অগণিত শিশু মেয়েদের নাম- সে স্বাতী জাতির অন্ধকার আকাশে ধ্রুবতারার মতো সংগ্রামী জনতাকে পথ দেখায়, যে স্বাতী রাতের অন্তিমে আসন্ন সূর্যোদয়ের আহবান জানাতে ঘন অন্ধকারেও প্রাণের আলো জেলে রাখে। “কলিজার রক্তে ভেজা মুহুর্তেই সে মুক্তি মহিমা ৩ জুলাই, ১৯৭১ দেশের শক্ৰ ছেলেটির বয়স ষোল কিংবা সতেরো। মুখের আদলটি কিন্তু আরও কচি। দেখতে চৌকস। এস-এস-সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীণ হয়েছিল দুটো লেটার নিয়ে। কলেজের ছাত্র ছিল ঢাকায়। মুক্তিফৌজের দফতরে এসে বলল, আমি গেরিলা যুদ্ধে নাম লেখাব। তুমি এত দেরী করে এলে কেন? প্রাথমিক তদন্তকারী অফিসার জিজ্ঞেস করলেন। কি করব? আব্বা দিচ্ছিলেন-না কিছুটা উষ্মা ও ক্ষোভ ছেলেটির কণ্ঠে। তোমার বয়সী ছেলেরা অনেকেই বাবার মতামতের অপেক্ষা করেনি। তদন্তকারী অফিসার বল্লেন। জানি, একটু বিরক্তির স্বর ছেলেটির কণ্ঠে। বলল, কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ করে আটকে রাখলে আপনি কি করবেন? তাহলে কি করে এলে? এবারে কৌতুহলের স্বরে অফিসারের কণ্ঠে। অনশন করে। তিনদিন যখন না খেয়ে রইলাম, তখন মা-কে দরজার তালা খুলে দিতে হলো। মা অবিশ্য তোমার বাবাই বা আটকালেন কেন?