পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

13| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ৫ আগষ্ট, ১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ বর্তমানে পঞ্চম মাসে পদার্পণ করল। প্রতিকূলতার মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম এবং প্রতিকূলতার মধ্যেই আওয়ামী লীগ ২২ বৎসর যাবৎ টিকে আছে। যুদ্ধ আমরা চাইনি, যুদ্ধ আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ চাইনি বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করেছিলাম। প্রতিপক্ষ অর্থাৎ পশ্চিম পাক সামরিক জান্ত ভেবেছিল আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলায় সংখাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে কিন্তু অধুনালুপ্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সামগ্রিক সংখাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। ওরা ভেবেছিল বাংলদেশের যে সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল আছে তাদের কিছু কিছু বাঘা বাঘা নেতা নির্বাচনে জয়লাভ করবেই এবং সেই সমস্ত কুইস্লিংদেরকে নিয়ে যে পরিষদ গঠিত হবে তাতে আওয়ামী লীগ খুব জোর হলে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে পরিষদে আসন গ্রহণ করবেন কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে বিগত নির্বাচনে সাড়া বাংলার সংগ্রামী মানুষ যেন y এক হয়ে গেল এবং শতকরা ৯৮ টি আসনে জয়লাভ করে অধুনালুপ্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠত অর্জন করে আওয়ামী লীগ তার পরেই শুরু হলো নতুন খেল। সেনাপতি ইয়াহিয়া খাঁ ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করে ফেরার পথে মন্তব্য করল যে “আমি পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে এসেছি।” এদিকে পূর্বেই আয়োজিত লারকানায় শিকারের বাহানায় ভুট্টোর সঙ্গে মিলিত হয়ে সেনাপতি ইয়াহিয়া ভুট্টোকে বলল যে, চিরাচরিত প্রথায় অর্থাৎ মন্ত্রিত্বের টোপ আমি দিয়ে এসেছি। ভুট্টো তুমি শক্ত হয়ে যাও। ভুট্টো তার চিরাচরিত প্রথায় আবোল-তাবোল বকা আরম্ভ করে দিল এবং তার ঔদ্ধত্য এতখানি বেড়ে গেলে যে, সে বলল- “পাঞ্জাব এবং সিন্ধু পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।” অথচ সবাই জানেন যে, সিন্ধু প্রদেশ ’৪৭ সালের পরে কোন সময়ই শাসনযন্ত্রের চাবিকাঠি হাতে পায় নি। পশ্চিম পাঞ্জাবের সামন্তপ্রভু এবং আমলাতন্ত্রের হাতের ক্রীড়নক হিসাবে সিন্ধু প্রদেশ অন্যান্য প্রদেশের ন্যায় কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতার যোগান দিত। আমাদের তরফ থেকে আমরা জবাব দিলাম যে, স্মরণকালে ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের পূর্বে পশ্চিম পাঞ্জাব কোন সময়ই রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস ছিল না, বরং বৈদেশিক আক্রমণে বিদেশীদের ভাড়াটিয়া লাঠিয়ালের কাজ করেছে। শুধু তাই নয়, আলেকজাণ্ডার হতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেননি। যাই হোক ভুট্টোর সাথে বঙ্গবন্ধুর যে আলোচনা হয়েছিল তাতে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, আমি জনগণের কাছে আমার দলের ৬-দফা এবং ছাত্রদের ১১-দফা কর্মসূচী দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি। এ থেকে একচুল নড়া আমার পক্ষ সম্ভব নয়। ভুট্টো বলেছিল সে তার দলের নেতাদের সঙ্গে আলেচনা করে পরে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করবে। কিন্তু পরবর্তীকালে ভুট্টোর ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ আপনাদের সকলেই জানা আছে। যাই হোক সংখ্যাগরিষ্ঠদলের নেতা হিসাবে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাপতি ইয়াহিয়াকে তারযোগে জানিয়ে দিলেন যে, যদি ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা না হয় তবে ১৪ই ফেব্রুয়ারী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের সভায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তহার পরে ১৩ই ফেব্রুয়ারী তারিখে সেনাপতি ইয়াহিয়া ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করে। এদিকে ভুট্টোর একগুয়েমির কারণে পহেলা মার্চ বেআইনী এবং অগণতান্ত্রিকভাবে সেনাপতি ইয়াহিয়া খাঁ পরিষদের অধিবেশন বসার আগেই মুলতবি ঘোষণা করে দিল। সারা ংলাদেশ আন্দোলনে ফেটে পড়লো। শত শত ছাত্র-জনতা ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হলেন। সংগ্রামী ছাত্রলীগ ২রা মার্চ প্রদেশের সর্বত্র প্রতিবাদ দিবস ঘোষণা করল এবং আওয়ামী লীগ