পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

132 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ৫ই মার্চ প্রতবাদ দিবস ঘোষণা কর। বঙ্গবন্দু ৭ই মার্চ রমনার ঘোড়দৌড় মায়দানে আয়োজিত লক্ষ লক্ষ মানুষের ঐতিহাসকি সমাবেশে ঘোষণা করলেন, “শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ দিযে আওয়ামী লীগ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে পারে না।” তিনি ঘোষণা করলেন যে, অবিলম্বে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সৈন্যদেরকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং ২রা মার্চ হতে ৬ই মার্চ পর্যন্ত যে সমস্ত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে তাদের হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে- অন্যথায় আওয়ামী লীগ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে পারে না। পরবর্তীকালে ১৫ই মার্চ থেকে সেনাপতি ইয়াহিয়া খাঁ তার উপদেষ্টাদের নিয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর উপদেষ্টাদের সাথে সুদীর্ঘ আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সকল শর্ত মেনে নিল এবং ২৪ কি ২৫শে মার্চের মধ্যে উহা ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিল। কিন্তু আসলে এই দীর্ঘসূত্রতা অতি সংগোপনে সামরিক প্রস্তুতির বাহানা ছাড়া আর কিছুই নয়। রেডিওর ঘোষণা দূরে থাকুক আসলে ২৫ই মার্চ রাতে ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে হানাদার বাহিনী বাংলার জনগণের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রথমে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা এবং বিভিন্ন রেজিমেণ্টে যে সমস্ত বাঙালী অফিসার ও নিয়মিত বাঙালী আছে তাদেরকে নিরস্ত্র করে হত্যা করা এবং ই-পি-আর ও পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দো। তাই তারা যেখানে সম্ভব হয়েছে সেখানে নিয়মিত বাহিনীর বাঙালীদেরকে হত্যা করেছে এবং ইপি-আর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং প্রদেশের অন্যান্য স্থানের ই-পি-আর পুলিশ বাহিনীর উপর সামরিক বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আমাদের বাঙালী ছেলেরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বন্দুক ঘুরিয়ে ধরেছে এবং দেশমাতৃকাকে হানাদারের কবলমুক্ত করার অগ্নিশপথে সারা বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিক-জনতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আজকে বাংলার প্রতিটি ঘর এক-একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়েছে। সেই জন্য মরিয়া হয়ে হানাদার বাহিনী নারী ও শিশু সমেত হাজার হাজার নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীকে হত্যা করে চলেছে। ইয়াহিয়া বাহিনীর এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাঁদের জন্য আমাদের মন ও প্রাণ শোকাপুত এবং অভিভূত।... আজকে আপনারা সকলেই বিষুব্ধ। বাংলার ঘরে এমন কোন পরিবার নেই যাদের কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন নাই। বঙ্গবন্ধুর নামে আজকে আপনাদেরকে ডাক দিযে যাই-বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। এই স্বাধীনতা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। মুক্তি বাহিনী আজ যথেষ্ট শক্তিশালী এবং দিন দিন এর শক্তি বেড়েই যাবে, কমবে না। আপনারা ধৈর্য করুন। বঙ্গবন্ধুর সুমহান নেতৃত্বে আমরা উদ্বুদ্ধ। একটি বাঙালী বেঁচে থাকা পর্যন্ত হানাদারদের রেহাই নাই। বাঙলা মায়ের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব কায়েম আমরা করবোই। বাঙালী হিসাবে জনেছি, বাঙালী হিসাবে বাঁচবো, বাঙালী হিসাবে আমাদের জীবনতরী বেয়ে যাবো আর বাঙালী হিসাবেই মরবো- এই মন্ত্রই হোক আমাদের যাত্রাপথের পাথেয়। পরিশেষে আমি বলতে চাই “আমাদের যাত্রা হলো শুরু এখন ওগো কর্ণধার, তোমারে করি নমস্কার। এবার বাতাস ছুটুক, তুফান উঠুক ওগো কর্ণধার।” আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। জয় বাংলা। (মিজানুর রহমান, এম-এন-এ)