পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

142 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড লড়াই করে এ পৃথিবী হতে চিরবিদায় না নিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে থাকা অনেক ভাল। তবুও আশা থাকবে ভাল হয়ে মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র পরিজনের সঙ্গে দেখা করার। স্পষ্টতই পাক বাহিনী ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমনকি সেদিন পাক পশুদের একটা চলন্ত আরম্ভ করে। তখনই মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন ও জনগণ গিয়ে গুলি না করে ছুরি দিয়ে পাক পশুদের কতল করে ফেলে। এই চার মাসের যুদ্ধে পাক পশুরা সেখানে যেভাবে নতুন নতুন কলাকৌশল করে প্রস্তুত নিয়েছে, পরক্ষণেই মুক্তিবাহিনী চারদিকে থেকে আক্রমণ করলে আস্তানাতেই চিরতরে মৃত্যুর কালো অন্ধকারে লুটিয়ে পড়েছে। এসব দেখেশুনে পাক পশুরা বাঙালীদের সঙ্গে আর যুদ্ধ করতে রাজী নয়। তাছাড়া বেশ কিছুদিন হতে পশ্চিম পাকিস্তানের যে সমস্ত লোক বাংলাদেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও এক নম্বর লাইসেন্স নিয়ে কন্ট্রাকটরি করত এবং বড় বড় চাকরিজীবী হয়ে বাংলার মাটিতে আধিপত্য বিস্তার লাভ করে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র তৈরি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করত, তাদের অনেকেই এদেশ থেকে চলে গেছে। খুলনা পোর্ট হতে জাহাজ ভর্তি হয়েছে তাদের মালপত্র-জীপ, ট্যাক্সি, খাট, আলমিরা, আসবাবপত্র ও এমন কি যাত্রীবাহী বড় বড় বাস পর্যন্ত। এইসব মালপত্র নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেছে। বাংলাদেশে কার্যরত সব লোকই খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে এদেশে তাদের থাকা চলবে না। একটা ঘটনার উল্লেখ করি। বেশ কিছুদিন আগে পশ্চিম পাকিস্তানী পশুদের মেজর খান আলতাফ হোসেনের ভাই, যিনি একজন সি এ্যাণ্ড বি’র প্রথম শ্রেণীর কন্ট্রাকটর, তিনি বক্তব্যগুলি তার আর এক বাঙালী প্রথম শ্রেণীর কন্ট্রাকটর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে পেশ করে বলেন, “রহমান সাহেব, এদেশে আমরা থাকতে পারব না। ভাইয়ের কাছে অনেক কিছু শুনলাম। যে কটা টাকা-পয়সা আছে তা নিয়ে আমি পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছি। আর আমার যে সমস্ত জিনিসপত্র রয়েছে, তা আপনাকে দিয়ে চলে যাব। আপনাদের দেশ মুক্ত হবার পর বেঁচে থাকলে পরে দেখা হবে।” এমন কি খুব গোপনভাবে তিনি বলে গেলেন, তার ভাই যশোর ক্যান্টনমেন্টে রয়েছেন কিন্তু খুলনায় থাকা বেশী নিরাপদ নয় মনে করে চলে আসতে চান- কখন কোন সময় কি হয় তার ভয়ে।’ এখন বুঝতেই পারা যাচ্ছে তাদের মনোবলের মিটার কত নীচুতে নেমে গেছে। অথচ টিক্কা এত ধাক্কা খাওয়ার পরও চিন্তা করতে পারে না কি গতি হবে তার। আর জঙ্গী এহিয়া ইসলাবাদের স্বপ্নপুরীতে থেকে মুক্তিবাহিনীর মার কি রকম কি করে বুঝিতে পারবে? যে স্বপ্নপুরী একদিন ওর বাপ বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের রক্ত চুষে অর্থ নিয়ে গড়ে তুলেছিল, সেখানে শুধু লালপানির শ্রাদ্ধ করা হয়। আর এদিকে তার দালাল ভাইস অ্যাডমিরাল মোজাফফর হাসান ঐ বর্বর কুকুরদের আস্তানায় আস্তনায় সাহস যোগাতে বেরিয়ে পড়েছে। হলে কিজ হবে, ফলে যে হচ্ছে তার উল্টো। মুক্তিবাহিনীর হাতে ওরা দিনের পর দিন মার খেয়ে হয়েছে দিশেহারা। ছিঃ ছিঃ লজ্জা করে একটা কথা বলতে মুক্তিবাহিনীর হাতে এত মার খাওয়ার পরেও ইয়াহিয়া আজও ভারতকে দোষারোপ করছে। লজ্জাহীনকে শিক্ষা দিতে হলে কিছুটা নির্লজ্জ না হয়ে পারা যায় না। এখন পর্যন্ত তো বাংলার মুক্তিবাহিনীকে স্বীকার করা হল না, অথচ মুক্তিবাহিনী বাংলার মাটিতে থেকে আজ হতে প্রায় চার মাস ধরে অবিরাম লড়াই করে যাচ্ছে, তবুও তারা ভারতের দুষ্কৃতকারী। যদি তাই-ই হয় তাহলে ইয়াহিয়ার প্রিয় দালাল ও পাক সেনাদের জিজ্ঞাসা করলেই তো সঠিক খবরটা পাওয়া যাবে। কারা তারা, যাদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পিছনে সরে যাচ্ছে? দালালেরা কিছুদিনের জন্য পরিত্রাণ পাবার আশায় তো রাজাকার বাহিনী করেছে। আর এই রাজকার বাহিনীতে যতসব চোর, বাটপার, বদমাইশ ও ডাকাতদের নেয়া হয়েছে- যারা সমাজের কাছে ঘৃণার পাত্র এবং যাদের সমাজে কোন ঠাই নেই। এদেরমধ্যে অবশ্য অনেকে জেল-হাজতে ছিল। এই সমস্ত লোকেরাই পাক পশুদের লুটতরাজ ও ঘরবাড়ি জুলিয়ে পুড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। তাদের নাম ইতিমধ্যে মুক্তিবাহিনীর কাছে ধরা পড়েছে। আসলে মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে জীবন রক্ষার্থে রাজকারের খাতায় নাম লিখেছে। অথচ দেখা গেছে, পাক বাহিনী এদেরকে ভালোভাবে বিশ্বাসও করে না। ঐ