পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

143 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এখন শুধুমাত্র মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামের কতগুলি দালালের দেহরক্ষী হিসাবে রাইফেল ঘাড়ে করে চলে, কোন সময় মুক্তিবাহিনীর সম্মুখীন হলেই অস্ত্রশস্ত্র ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে আবার ইয়াহিয়া ডিফেন্স সার্টিফিকেট, সেভিংস সার্টিফিকেট ও প্রাইজবণ্ড কেনার কতই না আহবান জানাচ্ছে: কিন্তু বিম্বসঘাতক এহিয়া জানো যে অন্ধ তার লাঠি একবারই হারায়। যে ভুল বাঙালী একবার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি আর করতে পায় না। কারণ তারা জানে এসব টাকা-পয়সা কোন দিনই আর ফিরে পাওয়া যাবে না । বাঙালীদের জানতে বাকি নাই যে, এগুলোর হেড অফিস ঐ দালালদের দেশে। সে জন্যই ব্যাঙ্ক-বীমার টাকা জমা দেয়া ও প্রিমিয়াম বন্ধ হয়ে গেছে। আজকে ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়ার দিতে গেল কোন দিনও আর সে টাকা ফিরে পাওয়া যাবে না। বরং ওদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হবে। অবশ্য বাংলদেশ মুক্ত হবার পর বাংলাদেশ সরকার এর একটা ব্যবস্থা করবে। আমরা পশ্চিম পকিস্তানী দালালদের কোন মালপত্র খরিদ করবো না। কোন কাপড়-চোপড় আমরা না কিনলে ওদের গুদামে সব জমা হয়ে হয়ে পচবে। এ জন্যই ওদের কল-কারখানা বন্ধ হতে বাধ্য। ইতিমধ্যে অনেক মিল ও কারখানা হতে শ্রমিক ছাঁটাই আরম্ভ হয়েছে। আমরা ওদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চিরতরে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবো। বাংলার মানুষকে ফাঁকি দিয়ে অর্থ সঞ্চয় করবার দিন ঐ ২৫শে মার্চের রাত ১০টায় ফুরিয়ে গেছে। যারা আজ পশ্চিম পাকিস্তানী দ্রব্য দেখেশুনে খরিদ করছে, তারা নরঘাতক এহিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা ছাড়াও বাংলার সম্পদ ভোগ করে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়ে, বাংলার সম্পদ ভোগ করে বাংলার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা যে কত বড় অপরাধ তার কৈফিয়ৎ ওদের দিতে হবে জীবন দিয়ে। বাঙালীরা তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করবেই করবে- যার জন্য দিনের পর দিন গ্রাম বাংলার প্রতিটি ছাত্র, শ্রমিক ও যুবকেরা এসে মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করছে। এরা সকলেই স্বাধীনতা রক্ষার বজ্রকঠিন শপথ নিয়ে বাংলার পথে-প্রান্তরে ঐ কুকুরদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে আলোয় ভরা আভা নিয়ে পূর্বদিগন্তে উদিত হবে। (অধ্যাপক এম, এ, সুফিয়ান রচিত) শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন ২৭শে জুলাই, ১৯৭১ (দ্বিতীয় পর্যায়) বাংলদেশ রত্নগির্ভা। বাংলাদেশে শুধু সম্পদ নয়, আছে মানুষের মত মানুষ। বাংলাদেশের জননেতারা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিজ দেশের জনগণকে ভালোবেসে যে নির্যাতন ভোগ করেছেন, তার তুলনা সমকালীন ইতিহাসে নেই। বঙ্গজননী তার কোলে শুধু তীতুমীর, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, বাঘা যতীনদের মত বিপ্লবীদের ধারণা করেনি, করেছে চিত্তরঞ্জন, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর মত বিখ্যাত নিয়মতান্ত্রিক নেতাদেরও নিয়মতান্ত্রিক নেতা হয়েও এরা দেশের জন্য কম নির্যাতন ভোগ করেননি। শেরে বাংলা ফজলুল হককে পাকিস্তানের তৃতীয় বড়লাট গোলাম মোহাম্মদ দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে নজরবন্দী করেছিলেন। এই বৃদ্ধ সর্বজনমান্য নেতাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শয়তান শাসকচক্র ঈদের নামাজের জামাতেও যোগ দিতে দেয়নি। এর চাইতেও নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর সঙ্গে। হৃদরোগে আক্রান্ত এই নেতাকে বৃদ্ধ বয়সে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক ষড়যন্ত্রের কাল্পনিক অভিযোগে দীর্ঘ ছয় মাস