পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|5|| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দ্য গল মন্ত্রীপরিষদের সংস্কৃতি দফতরের বিদগ্ধ মন্ত্রী এই প্রখ্যাত সাহিত্যিক দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসী বর্বরতা নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি জানেন যুদ্ধ কি। তিনি জানেন, অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে কিভাবে গড়ে ওঠে এবং তিনি জানেন মুক্তিযুদ্ধ কি। এই কটনীতিক ও সংবেদনশীল মানুষটির অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। ফ্রান্সকে নাৎসী জার্মানীর কবল থেকে মুক্ত করার জন্যে একদিন জেনারেল দ্য গলকেও ইংলিশ চ্যনেল পার হয়ে ইংল্যাণ্ডে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। জেনারেল দ্য গল তখন মুক্তিযোদ্ধা-স্বদেশকে মুক্ত করার জন্যে তিনি সংগ্রাম করছেন। আলজেরিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরাসী বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকের ভূমিকাও এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। এই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সাহায্যের জন্যে অনেক প্রখ্যাত শিল্পী-সাহিত্যিক কারাগার বরণ করেন। এ সম্পর্কে এ কালের বিবেকের অন্যতম মুখপাত্র জাঁ পল সাত্রের নাম উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সাত্ৰ নাৎসী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। শুধু সাত্ৰ নন, ফরাসী দেশের অন্যতম প্রখ্যাত সাহিত্যিক আলবেয়র কামুও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়াও বহু প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী যুদ্ধে সৈনিক হিসাবে যুদ্ধ করেছেন কিংবা পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন Anglo-Spanish যুদ্ধে নিহত হন। স্পেনের কবি গার্সিয়া লোরকাও স্পেনের গৃহযুদ্ধ শহীদ হন। প্রখ্যাত মার্কিন ঔপনাসিক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে স্পেনের গৃহযুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রথম মহাযুদ্ধেরও তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে সৈনিক ছিলেন মহান সোভিয়েট ঔপন্যাসিক ঋষি টলষ্টয়। এ যুগের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আর একটি উজ্জ্বল তারকা গ্রীসের মিকিস থিওডোরাকিস। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। কিন্তু এই বিপ্লবী শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ মিকিস থিওডোরাকিস গ্রীক সামরিক জান্তার উৎপীড়নকে না মেনে নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠলেন। গ্রীক সামরিক জান্তা তাকে বন্ধ করে রেখেছে কারাগারে।... মুক্তিযুদ্ধে শত্রকবলিত দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এক-একজন মুক্তিযোদ্ধা। সকলেই হয়তো রণাঙ্গনে শত্রর সাথে প্রত্যক্ষ মোকাবেলা করেন না- কিন্তু সকলেই যুদ্ধ করছেন। কেউ নিস্ক্রিয় নয়, সকলেই সক্রিয়। এই মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী, কবি, শিল্পীদের একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে- তারা সংগ্রামীদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখেন, তাঁদের গান, কবিতা ও রচনার মাধ্যমে। উদাত্ত সঙ্গীত, বিজয়গাথা । রণক্লান্ত সৈন্যরা আবার নতুন বলে বলীয়ান হয়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে যান। কবি তখন চারণের ভূমিকা গ্রহণ করেন। মসি ও অসির প্রাধান্য নিয়ে পুরোনো বিতর্ক সৃষ্টি করার সময় নয় এটা মসি এখন ঝলসে উঠুক অসির মত প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতিতে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ কবি, সাহত্যিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী আজ গৃহহারা। ঘাতক ইয়াহিয়া ২৫শে মার্চ রাতেই তাদেরকে খতম করতে চেয়েছিল। শিক্ষা-সংস্কৃতি বাংলদেশ থেকে উচ্ছেদ করার জন্যে নরপশু ইয়াহিয়ার জল্লাদবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের কোয়ার্টারগুলোতে আক্রমণ চালায়। বেশীরভাগই নিহত হয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো পালিয়ে বেঁচেছেন। কিন্তু এখনও যাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি কিংবা অসুবিধার জন্য যারা দেশের শত্ৰু-অধিকৃত অঞ্চলে রয়ে গেছেন, তারা কি করছেন- এটাই জানতে ইচ্ছে হয়। বলাবাহুল্য তারাও চুপ করে নেই। কি করে চুপ করে