পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

155 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড নরঘাতক ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, হামিদ খান, গং এর নির্দেশে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে ঠাণ্ডা করার মতলবে যে বীভৎস হত্যাকাণ্ড আর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে আসছে গত সাত মাস ধরে, পৃথিবীর তিহাসে তার নজীর নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা এতে ঠাণ্ডা না হয়ে বরং আরও বেশি একরোখা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রায় দু'কোটি মানুষ উৎখাত হলেও দেখা যাচ্ছে জনতা শুধু সামলে নেয়নি নিজেদের, পাল্টা আঘাত শুরু করেছে হানাদার বাহিনীর ওপর- প্রথমত সমূসূচীর দিক দিয়ে এইভাবে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার তুলনা নেই ইতিহাসে। সে জন্যই আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা মুক্তিসংগ্রামের নতুন নজীর স্থাপন করলো। তুলনা করার জন্যে দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে ফরাসী বিপ্লবের আমলের ফরাসী জনতার। ফ্রান্সের জনগণ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের শাসন-শোষণের যাতাকলে নিষ্পষিত হচ্ছিল। গ্রামাঞ্চলে কৃষকসমাজ আর শহরের মেহনতি মানুষ আর ব্যবসায়ীরা খাজনা-ট্যাক্সের কড়ি গুণতে গুণতে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিল। একদিন ফ্রান্সের হয়েছিল। পূর্ণ গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, ফরাসী জাতির নবজীবন আর মুক্তি আর মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্যে যে সংগ্রাম চলে আসছিল বিভিন্নভাবে, তা-ই দানা বেঁধেছিল সশস্ত্র বিপ্লবে। সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ প্যারিসের জনতা শুধুমাত্র সড়কি সম্বল করে দুর্ভেদ্য ব্যাষ্টিল কারাগার ভেঙ্গে ফেলেছিল। মুক্ত করে এনেছিল রাজবন্দীদের। তার পরে বিপ্লবী ফরাসী গণসেনাবাহিনী গড়ে তুলতে তাদের চার বছর লেগেছিল। অথবা বলা যেতে পারে, ফরাসী জনতা চার বছর সময় পেয়েছিল গণসেনাবাহিনী গড়ে তোলার। পরে অবশ্য তৎকালীন ইউরোপের সমস্ত দেশের রাজতন্ত্রী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করেছিল এই ফরাসী জনতার গণসেনাবাহিনী। রাজকীয় অস্ত্রভাণ্ডারগুলি দখল করে জনতার এই সেনাবাহিনী রাজতন্ত্রীদের সাঁজোয়া বাহিনী তুলোর মত উড়ে গিয়েছিল ফরাসী গণবাহিনীর ঝটিকা অভিযানে। এই গনসেনাবাহিনীর লোকদের নিয়মিত সামরিক পোশাক-আশাক ছিল নাব লে দের স্যানসবুলেট নাম হয়েছিল। জনতার মুক্তিসংগ্রাম জনতার মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত হবার পরে জনতার সুখে-দুঃখে, ভাবনায়-চিন্তায় জড়িত যে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়, তার সফল সূত্রপাত হয়েছিল এইভাবে। এদিক দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা আর মুক্তিবাহিনী ফরাসী বিপ্লবকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। স্মরণ করবে বিপ্লবের নেতা ড্যান্টনের অগ্নিবাণী- আমাদের চাই সাহস, আরও সাহস এবং আরও সাহস। শ্রদ্ধা জানাবে একথা মনে রেখেই যে, বাংলাদেশেও এমন লড়াই করছে, যা আজ এবং আগামী যুগে (রণেশ দাশগুপ্ত রচিত) পুতুল নাচের খেল ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মানুষ দখলীকৃত ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান শোনে না। গত পচিশে মার্চের পর থেকেই ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে তারা বর্জন করতে শুরু করে। এখন এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের নারী, পুরুষ, শিশু