পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

157 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ইমাম সাহেব বললেন, মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। মুসলমানদের কাছে তো কবিরা গুনা। এটা পবিত্র রমজান মাস বাবা। আমাদের কাছে বড়ই পবিত্র মাস। এই মাসে মিথ্যা কথা বলার মতো শোনাও মস্তবড় পাপ। ঢাকা বেতার থেকে এই রমজান মাসেও রাত দিন যে মিথ্যা বলা হয়, আল্লাহর বান্দা, নবীর উম্মত হয়ে তা কেমন করে বরদাস্ত করি বাবা?... তবু মনকে চোখ ঠেরে না হয় ঢাকা বেতারের প্রাচারই বিশ্বাস করলাম, কিন্তু এর পরই একদিন শুনলাম নতুন প্রচার। শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানের মিলিটারি সরকার বর্ডারে অভ্যর্থনা শিবির খুলেছেন। শুনে আমরা সবাই বেকুব ঢাকা বেতারই এতদিন বলে এসছে, যারা দেশ ছেড়ে গেছে তারা দৃস্কৃতকারী, তারা ভারতের চর। এখন সেই দৃস্কৃতকারী ও ভারতের চরদেরই আবার ফিরিয়ে আনার জন্য অভ্যর্থনা শিবির খোলা কেন? এটা গেল জুলাই মাস পর্যন্ত প্রচার। আগষ্ট মাস ও সেপ্টেম্বর মাসে শোনা গেল নতুন কথা। দলে দলে শরণার্থী ভারত থেকে দখলীকৃত বাংলাদেশের ফিরে এসেছে। ঢাকা বেতর থেকে বলা হলো, রোজ হাজারে বললেন, হাজারে হাজারে দেশত্যাগী ফিরে আসছে? এটা যে বাবা আমাদের সেই পুঁথির বয়ানের মত লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারে শুমার করিয়া দেখি চল্লিশ হাজার। মাঝখানে ঢাকা বেতারের মুরুবিবরা বোধ হয় বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের মিথ্যা প্রচার বিশ্ববাসীর কাছে ধরা পড়ে গেছে। তাই ফাঁক বুঝে এক সময় বলা হলো, ভারতে কিছু শরণার্থী গেছে বটে, কিন্তু তাদের ভয় দেখিয়ে ও লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শোন বাবা কথা। বিদেশের রেডিওতেও শুনেছি, বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে নব্বুই লাখ শরণার্থী গেছে। কেউ লোভ দেখিতে বা ভয় দেখিয়ে এতগুলো লোককে রাতারাতি দেশছাড়া করতে পারে? আর যদি তা পারাই যায়, তাহলে তোরা কেন বাপু ভারতের অন্তত এক হাজার লোককেও ভয় দেখিয়ে, কি লোভ দেখিয়ে তোদের দিকে নিয়ে আসতে পারিস না? দেখা না তোদের কথার সত্যতা। ইমাম সাহেব থামলেন, দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, কত আর বলবো বাবা, বললে কিসসা ফুরায় না। শিবিরে ফিরে যাচ্ছে। যে হারে হিসাব দেয়া হয়েছে, তাতে এতদিনে নব্বুই লাখ লোকেরই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন ওই ঢাকা বেতারেই তাঁবেদার গভর্নর মল্লিক মিয়ার একটা ভাষণ শুনলাম। মল্লিক মিয়া বলেছেন, ভারত রাজি হলে তারা বিমান পাঠিয়ে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেবেন। শোন বাবা কথা! এতদিন তোরা বল্লি সব শরণার্থী ফিরে গেছে। তাহলে বিমানে কবে কাদের আবার ফিরিয়ে নিতে চাইছিস? এ জন্যই কথায় বলে, মিথ্যাবাদীর স্মরণশক্তির কম। আগে জেনেশুনেও ওরা কত মিথ্যা বলতে পারে, তা যাচাই করার জন্য ঢাকা বেতর ধরতাম। এখন আর ধরি না। এই রমজান মাসে মিথ্যা শোনাও পাপ। বাবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই কথাটা কেন তোমরা ঢাকা বেতারকে জিজ্ঞাসা কর না- প্রত্যেক দিন এত মিথ্যা কথা বলতে ওদের জিহবা আড়ষ্ট হয়ে যায় না? ঈমান কমজোর হয়ে যায় না? আমি বাবা এখন ঢাকা বেতার ধরি না। কেউ ধরে না। খামোখা কেন মিথ্যা কথা শুনে গুণাহগার হই বলো! তার উপর এখন তো আবার রমজান মাস। ইমাম সাহেবকে বললাম, এ নিয়ে দুঃখ করবেন না। দখলীকৃত ঢাকা বেতারে এখন চলছে পুতুল নাচের খেল। পুতুলকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে, তাই তারা বলছে। যে খেল খেলানো হচ্ছ তা-ই তারা বলছে। মেফিষ্টোফিলিস আর ফাউষ্টের কাহিনী আপনি জানেন না- শয়তানের কাছে আত্মা বন্ধক রেখে এক সাধুর কি পরিণতি হয়েছিল। ঢাকা বেতারেরও এক শ্রেণীর ভাড়াটিা বুদ্ধিজীবী তাদের আত্মা, বিবেক, সততা ও মনুষ্যত্ববোধ কয়েকটা টাকার বন্ধক রেখেছে খুনী দস্য ইয়াহিয়া চক্রের কাছে।