পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|62 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এবং হতহাতের সংখ্যা বহু বলে উল্লেখ করা হবে। সবশেষে বলা হবে, কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ দিনের পর দিন তোতার কণ্ঠে রেডিও গায়েবী আওয়াজের এই বাণীই শুনতে পাওয়া যাবে। অনুপ্রবেশকারীর ংখ্যাও আবার কয়েক হাজার, কিন্তু তোমার প্রভুর ক'জন বরকন্দাজ মারা গেল সে সম্পর্কে গায়েবী আওয়াজ এক্কেবারেই চুপ৷ সমরবিদ্যার সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিরও পেটের পিলে এই জাতীয় কথাবার্তা শুনে ফেটে যেতে পারে হাসতে হাসতে। সীমান্তের কয়েকশ’ গজ ভেতরে, হতাহতের সংখ্যা বহু, কয়েকজন গ্রেফতার’- অর্থাৎ সঠিক সুস্পষ্ট কোন তথ্য তোতার মুখে ভুল করেও শোনা যাবে না। যদি প্রশ্ন করা যায়- মাথা খারাপ হয়েছে, ও কথা মুখে আনবেন না। কোন তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা সাফ মানা। তার উপর তোতা কি প্রশ্ন করতে পারে? কিন্তু মুশকিল হোয়েছে গ্রামোফোন কোম্পানীর তোতা আর তার প্রভু ছাড়াও বাইরের যে জগতটি রয়েছে তাকে নিয়ে তারা তো তোতা নয়, তাই প্রশ্ন তারা তুলছে। বলছে, নাদীর শাহের বংশধর আর গোয়েবলসের মন্ত্রশিষ্যারা হাতে কোন সুস্পষ্ট তথ্য থাকলে ছাডুন। কয়েক হাজার অনুপ্রবেশকারী, কয়েকশ’ গজ ভেতরে, কয়েকজন গ্রেফতার, হতাহত বহু- এসব কথা শুনলে তো পাগলেও হাসবে। বাংলাদেশে কি ঘটেছে বা এখন কি ঘটছে, সে সম্পর্কে তোতার মুখের কাহিনীর ছাড়া অন্য কিছু যাতে দুনিয়ায় প্রচারিত না হয় তার জন্যই ইয়াহিয়া খাঁর আর সাঙ্গপাঙ্গরা প্রথমেই সমস্ত বিদেশী সাংবাদিককে ঢাকা সাংবাদিককে বাংলাদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো। সেই সঙ্গে বলে দেয়া হলো- অমুক অমুক জায়গায় যেতে পারবেন না, তমুক তমুক কথা লিখতে পারবেন না। অমান্য করলে হয় ফাটক, না হয় লেখা গুম। এতসব বাধানিষেধ সত্ত্বেও বিদেশী খবরের কাগজগুলো যা লিখছে, তাতে জঙ্গীশাহীর বিচারের বেলুনটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ‘নিউজউইক’ পত্রিকার কথাই ধরা যাক। এই মার্কিন সাপ্তাহিকীটির সাথে সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খাঁ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ অপরিহার্য বলেছিলেন। সেই কাগজই লিখেছে, ইয়াহিয়ার সরকার যাদেরকে অনুপ্রবেশকারী, ভারতীয় চর বলছে, তারা তো শুরু থেকেই লড়ছে সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে। এরা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর লোকজন ছাড়া আর কিছুই নয়। পত্রিকাটিতে ভারতীয় গোলাবর্ষণের পাকিস্তানী অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শেলগুলো পরীক্ষা করলেই যে কোন পর্যবেক্ষক বুঝতে পারবেনএগুলো নিকটপাল্লার কামান বা দুইঞ্চি মর্টার থেকে বর্ষিত হয়েছে। দূরত্ব বিচার করে একথা অনায়াসে বলা বলে, ভারত থেকে বর্ষণ করলে শেলগুলো এত দূরে আসতে পারে না। বিলেতের কাগজগুলো বলছে, বিবিসি বলছে, ফ্রান্সের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সংবাদপত্র ‘লামদ বলছে একই কথা। কিন্তু তাতে কি আসে যায়! তোতার শেখানো লবজ তা পালেট যাবে না। এরপর ধরুন না অবস্থা স্বাভাবিক, দেশপ্রেমিকেরা দুষ্কৃতকারীদের ধরিয়ে দিচ্ছে তোতার এ বাণীর কথা। দেশপ্রেমিক নাগরিকরা জঙ্গিশাহীর সাথে এমনই সহযোগিতা করছেন যে, এখন তাদের উপর পিটুনি ট্যাক্স ধার্য করতে হচ্ছে জঙ্গীশাহীকে। এতেও যদি নিজেদের দৈন্য প্রকাশ না পায়, তবে দৈন্য’ শব্দের আধিধানিক অর্থই পাল্টে ফেলতে হবে। বিবিসির ভাষ্যকারের মতে, পিটুনি ট্যাক্স ধার্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, জঙ্গীশাহীর এ দাবির অসারতা দুনিয়ার মানুষ বুঝতে পেরেছে। শুধুই তাই নয়, মুক্তিবাহিনীর লোকজন বাংলার মানুষের যে অকুণ্ঠ সহযোগিতা পাচ্ছে, এ থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। গার্ডিয়ান, ডেলি টেলিগ্রাফ ও বিবিসির মতে, বাংলাদেশের মাইলে পর মাইল এলাকায় ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী বা তার ক্রীড়নক সরকারের কোন অস্তিত্ব নেই। সেখানে মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব সূদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। সর্বোপরি ইয়াহিয়ার চামুর দল রাতের বেলা কোথাও বের হতে সাহস করে না।