পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|63 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড মুক্তিবাহিনীর সাথে লড়াইয়ে জঙ্গিশাহীর এই যখন হালহকিকত, সৈন্যদলের মোর্যাল ঠিক রাখার জন্য তখনই খাঁ সাহেবরা গোয়েবলসের প্রেতাত্মার ঘাড়ে ভর করেছেন, তাই প্রতিদিন কুৎসা আর মিথ্যার বোঝা তাদের বেড়েই চলেছে। কিন্তু এমন দিন আর দূরে নয়, যখন মিথ্যার বোঝা চাপা পড়ে জঙ্গশাহীকে পুঁজিপাটাসমেত পৈত্রিক প্রাণটাও হারাতে হবে। ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১ একেবারে গোমড় ফাঁক! ইয়াহিয়া খাঁর জবর বাক্যবাগীশ জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজীকে একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে মার্কিন কাগজ ‘নিউজউইক’। এত জাঁক করে তিনি বলেছিলেন, মার্চে যা করেছি, প্রয়োজনবোধে আবার তা করবো ঢাকার রাজপথে। আমাদের ট্যাঙ্কগুলো অপেক্ষা করছে। কিন্তু নিউজউইকের সিনিয়র এডিটর আরনড-দ্য-ব্ৰচগ্রেভ তো আর নিয়াঁজীর ক্যান্টনমেন্টের সিপাই নয়। সাফ বলে দিয়েছেন, জেনারেল তুমি মূখের স্বর্গে বাস করছো। পায়ের তলায় মাটি যে কতটা সরে গেছে তার খবর রাখ না। বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ থানার উপর তোমাদের কোন কর্তৃত্ব নেই। মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব সেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত। খোদ ঢাকার উত্তরাংশ এখন মুক্ত। বাংলাদেশের ৭২ ঘন্টার মধ্যে অভিযান শেষ করার লম্বা-চওড়া আশ্বাসদানীকারী নরঘাতক জেনারেল টিক্কা খানের সর্ববৃহৎ বেলুনটি চুপসে যাওয়ার সাথে সাথেই এ, এ, কে নিয়াজীর আবির্ভাব। পাঞ্জাবের সাবেক সামরিক প্রশাসন এই জেনারেলের ভূমিকা সামরিক চক্রের জঘন্য ষড়যন্ত্রগুলিতে কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ’৬৯ সালের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী-মার্চ যখন সারাদেশ গর্জে উঠেছিল আইয়ুবের স্বৈরাচারী কুশাসনের বিরুদ্ধে, হরতাল মিছিল আর ঘেরাওয়ে প্রকম্পিত হয়েছিল সামন্ত প্ৰভু একচেটিয়া পুঁজিপতি আর সামরিক অফিসারদের বাড়িতে বাড়িতে সেই সময়ে এই নিয়াজীকে দেখা যায় ঝিলামের একটি সামরিক ছাউনি এলাকায় অফিসারদের সাথে সলাপরামর্শ করতে-সংগঠিত করতে। ’৬৯ সালের ২৫ মার্চের ইয়াহিয়ার সামরিক অভু্যত্থানের নেপথ্য কাহিনী সম্পর্কে লিখতে গিয়ে লণ্ডনের ডেলী টেলিগ্রাফ বলেছিল, জেনারেল নিয়াজীর-যাকে সামরিক চক্র টাইগার নিয়াজী বলে অভিহত করে থাকে- নেতৃত্বে একদল অফিসার এই মর্মে আলটিমেটাম দিয়েছিল যে তারা বাংলাদেশের তথাকথিত অরাজকতা কোনমতেই বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তাদের মতে, এই সমেয় যা চলেছে তাকে বাড়তে দিলে সব যাবে। শোনা যায়, ঝিলামের সেই কুখ্যাত বৈঠকেই ঠিক করা হয়েছিল, বাংলাদেশের গণঅভু্যত্থানকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য যদি দরকার হয় তবে লক্ষ লক্ষ লোককে সাবাড় করে দেওয়া হবে। শহরে-নগরে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলের উপর প্রয়োজনবোধে চালানো হবে ট্যাঙ্ক। তবে নিয়াজীর বড় আফসোস ছিল ’৬৯ সালেই এগুলো ঘটেনি বলে। অতএব নিয়াজী এ্যান্ড কোম্পানীরা বাংলাদেশের গণহত্যার ব্লপ্রিন্টটা দু’বছরের জন্যে কোল্ড ষ্টোরেজে রেখে দিয়েছিলেন। তাই ’৭১ সালের মার্চের শুরুতেই বাংলাদেশের মানুষের অসহযোগ আন্দোলনের আলোতেই এইসব জেনারেলরা তাদের বিপদের সংকেত দেখতে পেলো। কায়েমী স্বার্থ বিপন্ন। তাই তারা চক্রান্তের জাল ফেলতে শুরু করলো একে একে। অবশেষে এলো ২৫শে মার্চের সেই কালোরাত। টিক্কা খাঁর সাথে সাথে জেনারেল নিয়াজী বাংলাদেশে এলেও প্রেক্ষাপটে তার আগমনবার্তা ঘোষিত হয়নি। কিছুটা নেপথ্যেই রয়ে গেলেন তিনি। দায়িত্ব দেওয়া হলো বাঙালী নিধনের অপারেশনের। তারপর একদিন রণাঙ্গণে তার আবির্ভাব সামরিক প্রশাসন ও ইষ্টার্ন কমান্ডের কমাণ্ডাররূপে। কিন্তু এবারে জেনারেল সাহেবের এস্টার্ন কমান্ড একোবরেই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে মুক্তিবাহিনীর গোলা আর বুলেটের আঘাতে আঘাতে অবস্থা বেগতিক দেখে রাজাকার নামক একদল ক্ষুদে ডাকাত সৃষ্টি করা “হাতে অস্ত্র আছে বলে রাজাকারদের দল নিজেদের খোদা বলে মনে করে। যত্রতত্র নিরীহ নিরস্ত্র জনসাধারণের কাছ থেকে