পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| 67 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড প্রতিষ্ঠিত করার মহান সংকল্প নিয়েছে। জেগেছে মানুষ, জেগেছে প্রাণ, খুলেছে দুয়ার। কার সাধ্য বিজয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কার সাথ্য অন্ধকারে রাজত্ব কায়েম করে। সাধ্য যে নেই তার প্রমাণ বাংলাদেশ, রক্তাক্ত বাংলা, সংগ্রামী বাংলা। সাধ্য যে নেই তার প্রমাণ বাংলার মানুষ, প্রমাণ তাদের সংগ্রামী চেতনা। সেই চেতনার কথা বলছেন বাংলারই এক কবিঃ আমার চেতনা ঘিরে বিচ্ছুরিত এক কণা গড়ে তোলে আর এক রক্তিম চেতনা পৃথিবীর সব কথা স্নান ভেবে অনেক বিস্মৃতি মুছে ফেলে আজ জেগে থাক রক্তাক্ত স্মৃতি। এই রক্তাক্ত অনুভূতির কথা বাংলার হৃদয়কে উজ্জীবিত করেছে। বাংলার যে মানুষ চিরকাল শান্তি শত্রু র সঙ্গে যুদ্ধ করতে। আজ শক্র হননের পালা। জীবন আজ উৎসর্গিত হবে জীবন বাঁচাতে- জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে, প্রতিষ্ঠিত করতে এমনভাবে যেন শত্রু আর শান্তির নীড়ে হানা দিতে না পারে। তাই আজ চারিদিকে লাল সূর্যের অভু্যদয়।... ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জোরদার করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু পত্রপত্রিকা বেরিয়েছে। আওয়ামী লীগের মুখপত্র ‘জয় বাংলা সাপ্তাহিক বাদে বাংলার বাণী, নতুন বাংলা, বিপ্লবী বাংলা, স্বদেশ, দাবানল প্রভৃতি নানা নামের পত্রপত্রিকায় আমাদের বীর যোদ্ধাদের অগ্রগতির সংবাদ, অজেয় মনোবল ও অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের কাহিনীসহ দেশী-বিদেশী সংবাদ সব সময় বেরুচ্ছে। দেশের জনসাধারণকে সব ব্যাপারে ওয়াকিফহাল রাখতে এই পত্রপত্রিকাগুলো নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে। হানাদারদের মিথ্যা প্রচারের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য দেশপ্রেমিক সাংবাদিকরা মন-প্রাণ দিয়ে পরিশ্রম করছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ার যে প্রচণ্ড প্রচেষ্টা দেশের মানুষ সব সময় করে চলেছে, এটা তারও একটি অংশ। দেশবাসীর মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখতে সংবাদপত্র যে মহান ভূমিকা পালন করতে পারে সেই ভূমিকাই আন্তরিকভাবে এইসব পত্রিকাগুলো পালন করে চলেছে। সংগ্রামীরা যুদ্ধের সংগে সংগে কলম ধরেছেন এবং দেশপ্রেম ও সংগ্রাম এক হয়ে যে আগুন ঝরাচ্ছে তা অনুভব করতে হলে এই পত্রিকাগুলো বার বার পড়া দরকার। মুক্তিযোদ্ধারা ডায়েরীর আকারে তাদের অভিজ্ঞতার কথা সব সময় লিখছেন এখানে। দাবানল’ পত্রিকায় ‘গেরিলার ডায়েরী’ লিখেছেন মুকুল নায়ক। ৩১শে অক্টোবর সংখ্যায় ইনি লিখেছেন : “আমি একজন গেরিলা নায়ক। গত মাসে পাবনার বিভিন্ন মুক্ত এলাকা ঘুরেছি। গ্রামবাংলার মানুষ এত দুঃখ, কষ্ট ও নির্যাতনের মাঝেও সুকঠিন মনোবল নিয়ে থাকতে পারে এটা একটা বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত ছাড়া কিছুই নয়। তাদের বাড়ি-ঘর দসু্যসেনারা জুলিয়েছে, লুট করেছে মা-বোনের ইজ্জত, হত্যা করেছে নিরীহ মানুষকে, তবুও তারা মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছেন মুক্তিবাহিনীর আগমনের অপেক্ষায়।... তারা দেশকে শত্রমুক্ত করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন।... তাদের সকলের কথা অস্ত্র চাই, মরতে হয় যুদ্ধ করে মরবো, দেশকে স্বাধীন করবোই।” কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল তাদের চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি বেরুচ্ছে।