পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

168 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এরপর লেখক দালাল, দসু্য ও পাকসেনাদের খতম করার কাহিনী বলেছেন : “রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে এলো আমাদের গেরিলা ইউনিটসমূহের দলপতিগণ।... গাজনার বিলে অপারেশন করে এগারোজন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে ধরে এনে গণআদালতে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বাকী দুষ্কৃতকারীগণ গ্রাম থেকে পালিয়েছে।... তৃতীয় দল নগরবাড়িগামী পাকসেনা বোঝাই ট্রাকের উপর আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন পাকসেনাকে খতম করেছেন। তাদের বীরত্বপূর্ণ কাজের কথা শুনে সত্যি আনন্দ অনুভব করছিলাম।” বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার ডায়ের প্রকাশিত হচ্ছে। বরিশাল থেকে মিজানুর রহমান লিখেছেন তার উপর পাকসেনাদের নির্যাতনের কথা, কিভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করলেন তার কথা। তিনি লিখছেনঃ “মৃত্যুর হাত থেকে আমি বেঁচে এসেছি। বাঁচিয়েছে মুক্তিসংগ্রামী আবদুল জলিলকে। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি শহীদুল হাসান, শাহজাহান ও আমির হোসেনকে। ওরা আজ মৃত্যুর দেশে বসে আমাদেরকে আশীৰ্বাদ করছে।” এই স্মৃতিচারণের পর লেখক বর্ণনা করেছেন, কিভাবে তারা পাঁচ বন্ধু খান-সেনাদের হাতে বন্দী হলেন। এরপর তিনি লিখছেনঃ “পাক হানাদাররা আমাদের পাঁচজনকে পাঞ্জাবী পুলিশের হেফাজতে রেখে চলে গেল যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে।... এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হোল থানায়। সেখানে পাঁচজনের উপর চলল নির্যাতন।... শরীর কেটে লবন পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। সমস্ত রাত ধরে চলল এমনি অত্যাচার, পর দিনও কাটল। আবার রাত হলো।... দেখতে দেখতে এক সময় চরম মুহুর্ত ঘনিয়ে এলো। ফায়ারের অর্ডার হলো। তিনজন পাঞ্জাবী পুলিশের রাইফেল গর্জে উঠল, লুটিয়ে পড়ল শহীদুল হাসান, শাহাজান, আমির হোসেন। আবার ট্রিগার টানা হলো মুহুর্ত পরেই লুটিয়ে পড়ব আমরা বাকী দুজন, কিন্তু এমন মৃত্যুই কি চেয়েছিলাম? না, না, প্রতিশোধ নিয়ে তবে মরতে হবে। পাশেই স্রোতস্বিনী নদী বয়ে চলেছে- বাঁচতে হবে, প্রতিশোধ বুকে। হে দেশমাতা, তোমার বুকে ঝাঁপ দিয়েছি, তুমিই গ্রহণ করো। রাতের আধাঁর বিদীর্ণ করে ঝাকে ঝাকে গুলি এসে পড়তে লাগল নদীর বুকে, জলিলকে ধরে ডুব দিতে দিতে ওদের নাগালের বাইরে চলে এলাম, এবার প্রতিশোধ।”..... ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা এক বিচিত্র অবস্থার মধ্যদিয়ে এ বছরের ঈদ উদযাপন করলো। দেশের মাঝে পশুশক্তির প্রতীক ইয়াহিয়া চক্র নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে, নিরস্ত্র বঙ্গবাসী প্রাণ রক্ষার্থে ব্যতিব্যস্ত, আর বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনপণ করে লড়ছে শত্রর সঙ্গে। বিভিন্ন সেক্টরে খান সেনারা আজ কাপুরুষের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে, দিন গুণছে মৃত্যুর। এমনি পরিবেশের ঈদের চাঁদ উঠলো, ঈদও হয়ে গেল- কিন্তু বাঙালী