পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|69 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কণ্ঠে, আব্বাসউদিনের কণ্ঠে শুনতে পেলো না নজরুলের সেই বিখ্যাত গানঃ রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ। এতে বাংলাদেশের মানুষ দুঃখিত নয়। কারণ তারা জানে যে, কোনো জাতির জীবনে কোন কোন সময়ে এক-একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত আসে যখন তাকে স্থায়ী একটি সিদ্ধান্ত দিতে হয়, জীবন ও মৃত্যুর শত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। শত আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে তাকে এ কথা নিশ্চিত প্রমাণ করে যেতে হয় যে, পরবর্তী বংশধররা আর অত্যাচারিত, শোষিত, নিষ্পেষিত হবে না। সেই ঐতিহাসিক ও চরম মুহুর্ত আজ এসে গেছে। আমরা সেই ইতিহাস পরিবর্তনকারী, ইতিহাস সৃষ্টিকারী গৌরবময় মুহুর্তের মধ্যে আছি যখন আমরা বুঝতে পারছি “ফুল খেলবার দিন আজ নয়’- আজকের দিন হচ্ছে চরম সংগ্রামের, চরম আত্মত্যাগের, আত্মোপলব্ধির। বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব অবস্থা বিরাজ করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এবারকার ঈদ সম্পর্কে নানা মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রপত্রিকায়। সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা পত্রিকা ২ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় লিখেছেঃ এবার শারদোৎসবে বুড়ীগঙ্গার পারে যেমন বাজন বাজেনি, তেমনি এবার ঈদেও খুশীর চাঁদ বাঙালীর আকাশে ওঠেনি। খুশী হওয়ার উৎসব করার অবকাশ কই এখন বাঙালীর জীবনে? গোটা জাতি যখন তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ব্যস্ত, নরপশু ইয়াহিয়ার দসু্যচক্রের বিরুদ্ধে জাতি যখন জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত তখন উৎসব করার, আনন্দ করার অবকাশ মানুষের জীবনে থাকতে পারে না। গতবারও বাংলাদেশের মুসলমান রোজার ঈদে উৎসব করতে পারেনি। বারোই নভেম্বরের প্রলংকারী ঝড়ে সেবার বিশ লাখ বাঙালী মৃত্যুবরণ করেছে। দেড় হাজার মাইল দূরে তথাকথিত ইসলামাবাদের শাদাদী বেহেশতে বসে ইয়াহিয়া-চক্র বিশ লাখ বাঙালীর মর্মন্তদ মৃত্যু দেখে উপেক্ষার শয়তানী হাসি হেসেছে এবং আরো দশ লাখ বাঙালীকে হত্যার জন্য ছুরি শাণিয়েছে। গতবার বাংলার মুসলমান বিশ লাখ মানুষের মৃত্যুর শোকে রোজার ঈদে শোকাশ্ৰ চোখে কাতারবন্দী হয়েছে নমাজের ময়দানে,- এবার আরো বিশ লাখ ভাইবোনের লাশের স্তুপের উপর বসে তারা আকাশে দেখছে বাঁকা খঞ্জরের মত ঈদের চাঁদ। এবারও তারা উৎসব পালন করতে পারে না। আজ নয়, বাংলার আকাশে খুশীর ঈদের চাঁদ একদিন উদিত হবে এবং সেদিন সুদূর নয়- যেদিন ইয়াহিয়ার দসু্যবাহিনী বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হবে এবং স্বাধীন ও মুক্ত বাংলার নীলাকাশে শওয়ালের চাঁদ সব অশ্রুর কুয়াশামুক্ত হয়ে আবার খুশীর রোশনাই ছাড়বে। মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার ১লা অগ্রহায়ণ সংখ্যায়ও ঈদ সম্পর্কে একটি রচনা প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণেও বিধ্বস্ত একটি পাকা মসজিদের ছবিসহ এই রচনার এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে এসে ঈদ যেন এবার ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়াল। তার নামে যে কী একটা উৎকট দুর্গন্ধের দমকা হাওয়া ঢুকে পড়ে মুখটাকে একটু বিকৃত করে ফেললো। কী এক বিকট হাহাকার ও আর্তনাদের ধ্বনি যেন তার কানে তালা লগিয়ে দিলো। চোখ তুলে এক মুহুর্ত এদিক-ওদিক তাকিয়ে একেবারে আৎকে উঠল সে? ধ্যাননেত্ৰে যেন স্পষ্ট দেখতে পায় কোথাকার কোন রক্তপিপাসু রক্তপায়ী দানবের দল কামড়ে আঁচড়ে লাখো লাখো বাঙালীর মুণ্ডু ছিড়ে রক্ত ঝরিয়ে চলেছে। ধর্ষিতা বাংলার মা হতচেতন অবস্থায় মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আর এখনো যারা বাংলাদেশে প্রাণটুকু নিয়ে বেঁচে আছে তারা প্রায় সকলেই প্রিয়জনের