পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| 73 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এই মার্কিন প্রশাসন তাই উচ্চবাচ্য করেনি। মার্কিন সংবাদপত্র এবং উদারপন্থী সিনেটেরদের প্রবল চাপের মুখে নিক্সন সরকার শরণার্থীদের জন্য কিঞ্চিৎ খয়রাতি বিতরণ করলেও পিণ্ডির জল্লাদচক্রকে অস্ত্রশস্ত্রসহ সবকিছুর সাহায্যে মদদ দিয়েছে। যার পরিণতি ভারতের উপর পাকিস্তানী সামরিক চক্রের প্রকাশ্য নগ্ন হামলা। আজ নিজের চক্রান্ত জালে আটকে জবরদস্ত সেনাপতি ইয়াহিয়া খাঁর যখন নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে তখন পেয়ারের পিণ্ডিকে বাঁচানোর জন্য স্বস্তি পরিষদের দুয়ারে ছুটে গেছে নিক্সনের অগ্রদূত বুশ সাহেব। ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়ায় দিনের পর দিন নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে গ্রামের পর গ্রাম এমনকি বনাঞ্চল সাফ করে দিলেও আজ শ্যামচাচারা এই উপমহদেশের শাস্তির জন্য একেবারে বেচায়েন হয়ে পড়েছে। ভিয়েতনামে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য অপসারণে যে মার্কিন প্রশাসন অস্বীকৃতি জায়য়েছে সেই একই প্রশাসন আজ বাংলাদেশে যুদ্ধবিরতির আহবান জানাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবারের চক্রান্তে মার্কিনী “কাগুজে বাঘ” রা এক নয়। চীনের বিপ্লবী সাত্ত্বিক নায়করা এবার মার্কিন শ্যামচাচার সাথে ভিড়ে গেছেন। স্বস্তি পরিষদে প্রস্তাব পেশ ও ভোটদানের ব্যাপারে এ দুটো দেশ একই সাথে চলেছে হাতে হাত মিলিয়ে। পিকিং ও ওয়াশিংটন একের পর এক প্রস্তাব স্বস্তি পরিষদে উত্থাপন করেছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ইউনিয়নের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে তাদের সে চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে গেছে প্রতিবারেই। সোভিয়েট প্রতিনিধি জ্যাকব মালিক ভারতীয় প্রতিনিধি সমর সেনের বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশ সমস্যার মূল অনুসন্ধান না করে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায়সঙ্গত ও আইনানুগ অধিকারের কথা বিবেচনা না করে শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতির আহবান জানালে তাতে সমস্যার কোন সমাধান হবে না। তিনি স্বস্তি পরিষদের বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিকে তাঁদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েও একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাতেও সমর্থন জানানোর প্রয়োজনবোধে করেনি। জাতিসংঘ স্বস্তি পরিষদের ব্যর্থ হওয়ার পর পিণ্ডির মহাপ্ৰভু ওয়াশিংটন আর জানি-দোস্ত পিকিং একই সাথে জাতিসংঘের বাইরে দাবার ঘুটি চালাতে শুরু করেছে। নিক্সনের নির্দেশে সপ্তম নৌবহর সায়গন দরিয়ার পানি কেটে এগিয়ে চলেছে তথাকথিত মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারের অজুহাতে। অন্যদিকে তিব্বত চীনা সৈন্য নাকি নড়াচড়া করতে আরম্ভ করেছে। মার্কিন বা চৈনিক কার্যক্রমের পেছনে যে গৃঢ় অভিসন্ধিই থাকে না কেন, তাদের লেজের আগুনে আর একটি ভিয়েতনাম এই উপমহাদেশে কখনই করতে দেবে না বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি এবং ভারতের ৫৫ কোটি মানুষ। স্বাধীন দুনিয়ার বড় মোড়ল গণতন্ত্রের মেকি ভজনাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু ঘৃণাভরে উপেক্ষা করবে এই দু দেশের সাধারণ মানুষ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সককারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদও সাম্প্রতিক এক বেতার ভাষণে বলেছিলেন, এই উপমহাদেশ সম্পর্কে মনগড়া যে ধারণা নিয়ে কতিপয় বৃহৎ শক্তি থাকুন না কেন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম তাতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। নিক্সন প্রশাসনের চোখরাঙানি আরো একবার প্রমাণ করলো, গণতন্ত্রের জন্য যতই তারা চীৎকার করুক না কেন আসলে এরা দুনিয়ার সকল জঙ্গীচক্রের শয্যাসঙ্গিনী। ভিয়েতনামের থিউ, কম্বেডিয়ার লন নল, লাওসের ফুমি নোসাভান, থাইল্যাণ্ডের কিট্টিকাচরণ, কঙ্গোর মোবুতু আর পিণ্ডির ইয়াহিয়া সবাই শ্যামচাচার অবৈধ সন্তান। নিক্সন প্রশাসনের বাসনা থাকলেও বাংলদেশকে আর একটি ভিয়েতনাম বানানোর পথে বড় বাধা হোল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাগ্রত জনমত। ভিয়েতনামের জঙ্গীচক্রের শাসন বজায় রাখতে গিয়ে আমেরিকার শত শত মা হারিয়েছেন তাঁদের সন্তান, স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে, পিতা হারিয়েছে পুত্রকে। তাই আর একটি ভিয়েতনাম সৃষ্টির ঝুঁকি তাঁরা নিতে চান না। সিনেটের এডওয়ার্ড কেনেভী, সিনেটোর মাস্কি, সিনেটের ম্যাকগর্ভান এবং মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমোক্রেটিক পাটির নেতা সিনেটর মাইক ম্যান্সফিল্ড ইতিমধ্যেই পাকিস্তান সম্পকে নিক্সন প্রশাসনের ভ্রান্তনীতির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছেন। এই সিনেটরদের মধ্যে অন্ততঃ দুজন আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হতে পারেন। আশা করা যায়, এই অবস্থায়