পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

174 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড প্রেক্ষিতে নিক্সন সাহেব যত লম্ফঝফই করুন না কেন আর একটি ভিয়েতনাম সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজনৈতিক সমাধি রচনায় তিনি সাহসী হবেন না। সর্বোপরি, মার্কিন দুঃসাহসের পথে প্রচণ্ডতম অন্তরায় হয়ে আছে সোভিয়েট ইউনিয়ন। সোভিয়েট রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পদগণি ইতিমধ্যেই বৃহৎ শক্তিবর্গকে এই উপমহাদেশের সংকট থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি এ ব্যাপারে নাক গলানোর বিরুদ্ধে সকলকে হুশিয়ার করে দিয়েছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত স্বীকৃত সত্য। জাতিসংঘ বা বিশ্বের অন্যান্য দেশ যত তাড়াতাড়ি এই সত্যকে স্বীকার করে নেবেন, এই উপমহাদেশে সংকট তত তাড়াতাড়িই নিম্পত্তি হবে। এতে বিভ্রান্তি বা দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোন অবকাশ নেই। (লেখকের নাম জানা যায়নি) ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঢাকার অধিকৃত এলাকা থেকে চমকপ্রদ খবর এসে পৌছছে। দখলদার বাহিনীর তথাকথিত বেসামরিক প্রশাসনের শেষ কাঠামোটুকুও ভেঙ্গে ছারখার হয়ে গেছে। রেডক্রসের নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। চীফ সেক্রেটারী ও পুলিশের আইজিসহ আমলাদের একটি দলও মহাজনী পন্থা অনুসরণ করেছেন। কিন্তু ঢাকার লাখ লাখ বেসামরিক অধিবাসী এখন কি ভাবছেন, কি করছেন? বিগত নয় মাস ধরেই তারা বাস করছেন ইতিহাসের দীর্ঘতম অমাবস্যার রাত্রিতে। ২৫শে মার্চের কালরাতে আমবস্যার যে অন্ধকারে নেমে এসেছিল এখনও তার অবসানের প্রতিক্ষা। স্বজন হারিয়ে, সর্বস্ব যখন বলতে পারবো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি? সেই দিন যেদিন আসবে পাকিস্তানের রাহুগ্রাস থেকে সোনার বাংলার মুক্তি। বাংলাদেশের মুক্তির দ্বারপ্রান্তে ঢাকায় এখন চলেছে চূড়ান্ত সংগ্রামপিণ্ডির জল্লাদ দলের শাসন-শোষণের অবসানের শেষ সংগ্রাম। মুক্তির এই উষালগ্নে জঙ্গীশাহী যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করুক না কেন ঢাকার মানুষ কি ধাতুকে গড়া তা তারা ভালভাবেই জানে। ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়ক হবেন যে ঢাকার মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষ, একথা নিঃশঙ্কচিত্তে বলা চলে। গত এক দশকের ইতিহাসে যাঁরা জ্ঞাত আছেন, যাঁরা দেখেছেন কিভাবে ঢাকার মানুষ এই সময়ে জঙ্গী শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি হওয়ার জন্য একের পর এক দুর্বার গণঅভু্যত্থান গড়ে তুলেছে, তাঁরাই একথা স্বীকার করবেন। কামানের গোলা, মর্টারের শেল আর মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হয়েছে হাজারো হাজারে। কারফিউ আর ১৪৪ ধারা সেখানে নিত্যসহচর। সমুদ্র সেখানে শয্যা পাতা, জঙ্গীচক্রের আজকের শেষ চোখরাঙানিতে সেখানে ভয়ের কি আছে। ঢাকার সংগ্রামী নাগরিকরা পিণ্ডির জল্লাদ দলের সকল ভ্ৰকুটিকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের দিকে বার বার। ইয়াহিয়ার গুরুদের আইয়ুব খাঁর সামরিক শাসনের খবরদারীকে ছিন্নভিন্ন করে পথে নেমেছিলেন ঢাকবাসী গণতন্ত্রের দাবী কণ্ঠে নিয়ে ১৯৬২ সালে। মিছিলে মিছিলে রক্ত ঝরেছিল সেদিনে। আইয়ুবের ছবিগুলো হয়েছিল টুকরো টুকরো। আইয়ুবের দেওয়া ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার যুপকাষ্ঠ সংগ্রামের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল রমনার রাজপথে, পটুয়াটুলির অলিতে-গলিতে। আইয়ুবের মৌলিক ধরনের মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ঢাকার মানুষ সুস্পষ্টভাবে রায় দিয়েছিলেন আইয়ুবের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। এলো ১৯৬৬ সাল ঐতিহাসিক ছ’দফা আন্দোলনের ক্রান্তিলগ্ন। বাংলার স্বাধিকারের দাবীতে গর্জে উঠলো ঢাকা। ৭ই জুন স্তব্ধ হয়ে গেল নগরীর প্রতিটি ধমনী। মিছিলের ভৈরব গর্জনে প্রকম্পিত হোল একনায়কত্বের পাষাণ কারা। জনসন রোড, জিন্নাহ এভিনু্য, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শত শত শহীদদের রক্ত স্নান করেছিল কৃষ্ণচূড়ার লাল রং এরপর থেকে ঢাকার মানুষের বজ্রকণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে বারবার ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে। ৬৮-৬৯ সালের আইয়ুব-বিরোধী গণুঅভু্যত্থানের প্রবল জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পিণ্ডির শাসকচক্রের সকল জঞ্জাল। ঢাকার মুক্তিপাগল মানুষ সেদিন অগ্নিমন্ত্রে