পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

177 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড স হিত্য ধ্বংস করার জন্য চালানো হয়েছিল বর্ণমালা-বানান সংস্কারের দানবীয় অভিযান। বেতার-টে লভিশনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নিষিদ্ধ। রাজনীতিতে এই যখন অবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র সে সময়ে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আইয়ুব খান দেশের দু'অঞ্চলের মধ্যেকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবস্থাটা খতিয়ে দেখার জন্য একটি বৈষম্যের পরিমাণ আরো ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলার জাতিসংঘ বিকাশের সুযোগ-সুবিধার দাবী কণ্ঠে নিয়ে গড়ে উঠলো ঐতিহাসিক ছ'দফায় আন্দোলন। আকাশ-বাতাস মুখরিত হলো ‘জাগো জাগো, বাঙালী জাগো” আওয়াজে। হুঙ্কার ছাড়লেন বন্ধু নয় প্রভু’র ফিল্ড মার্শাল- অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করা হবে। বাংলার মানুষ অবিলম্বেই বুঝতে পারলো এ কথার তাৎপর্য। সাজানো হলো কুখ্যাত আগরতলা মামলা”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান থেকে শুরু করে অনেককেই জড়ানো হলো এই সাজানো মামলার জালে। কিন্তু বাঙালী এটাকে মেনে নেয়নি। আর মেনে নেয়নি বলেই ১১ দফা আন্দোলনের সূচনা, ’৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণবিপ্লবের অভু্যদয়। আইয়ুব ধনকুবের সামরিক চক্রের আরেক প্রতিভূ আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। পশ্চিমী শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশের প্রতি এবার তাদের নীতিতে কপটতার আশ্রয় নিল। দেশব্যাপী সাধরণ নির্বচনে অনুষ্ঠানের কথা ঘোষিত হলো। তারা মনে করেছিল জাতীয় পরিষদে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্ট করে তাদের শোষণের পাকাপোক্ত একটা রূপ দিতে পারবে। কিন্তু এবারেও বাংলার মানুষ এই চক্রান্ত প্রতিহত করলেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়যুক্ত করে। জাতীয় পরিষদে চক্রান্তের পথ রুদ্ধ হওয়াতেই সামরিক শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মানুষের উপর সরাসরি সামরিক হামলার পথ বেছে নিল। পাকিস্তানের বিগত ২৩ বছরের ইতিহাসে এইভাবে বারবার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বাঙালীর জাতিসত্তার সামগ্রিক বিকাশের প্রচেষ্টাকে হিংস্র পন্থায় দমন করতে চাওয়া হয়েছে। ৪৮, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ সালগুলো বাংলার মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একএকটি উজ্জ্বল স্বাক্ষর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী পাল্টা হামলা চালিয়েছে নব নব কৌশলে। তাই ৭১-এর ২৫শে মার্চের পর পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাঙালীর জাতিসত্তা বিকাশের পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে গেছে। এবার শুরু হয়েছে স্বাধীন জাতি হিসেবে দুনিয়ার বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার পালা। (আহমদ নাদিম রচিত)