পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

190 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৭। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-এর মে-ডিসেম্বর, ১৯৭১ প্রচারিত বাংলা কথিতমালা। দলিলপত্র ২৮ মে, ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের নিধনযজ্ঞে নেমে পাকিস্তানের সামরিকশাহী অকল্পনীয় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। লণ্ডনের যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেড় হাজার মাইল দূর থেকে এসে বাংলাদেশে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর দৈনিক এককোটিরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে- এ হিসেবে যুদ্ধের প্রথম পঞ্চান্ন দিনে পাকিস্তানের আড়াইশ’ কোটি টাকা খরচ ও ঘাটতি হয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন মাল রপ্তানি না হওয়ায় পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ নেমে কমেছে ১৫ কোটি ডলারে। বাণিজ্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ফ্রান্স-এর পত্রিকা ‘লা ফিগারোর মতে যুদ্ধের প্রথম মাসে অর্থাৎ প্রথম ত্রিশ দিনে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানী-বাণিজ্যের ক্ষেত্রের পশ্চিম পাকিস্তান একশ’ কোটি টাকা হারিয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা জমা ছিল ১২৭ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৯০ কোটি টাকা। যুদ্ধের দরুন এপ্রিলের শেষে সেই অংক কমে ৮২ মিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ প্রায় ষাট কোটি টাকায়। এবং বর্তমানে সেটা এসে ঠেকেছে ২০ কোটি টাকার কাছে। পাশ্চাত্যের অর্থ-বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন দেশের সংরক্ষিত তহবিলে বিশ কোটি ডলার অর্থাৎ এক শ’ কোটি টাকা জমা থাকা উচিত। এর কম হলে সে দেশকে অর্থনৈতিক দেউলিয়া দেশ বলা হয়। পাকিস্তানের সংরক্ষিত তহবিলে এখন জমা আছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। এদিক থেকে পাকিস্তান এখন সত্যসত্যই দেউলিয়া দেশ। মূল্যমান কমাতে সম্মতও হয়েছে। কারণ এখন আর উপায় নেই। ফ্রান্সের "লা ফিগারো পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে যে, মার্কিন সরকার পাকিস্তানের সামরিকশাহীকে এ বছর ষাট কোটি টাকার সাহায্য দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এখন আর তা দেয়া হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শে মার্চ অর্থাৎ বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনানায়করা যুদ্ধ শুরু করার দিন থেকে পাকিস্তানকে সাহায্য দেয়া স্থগিত রেখেছে। বৃটিশ সরকারের প্রতিশ্রুত সাড়ে একত্রিশ কোটি টাকার সাহায্য বন্ধ রয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট উপদেষ্টা মি.এম,এম আহমদকে বাংলাদেশে যুদ্ধ বন্ধ না করা পর্যন্ত পাকিস্তানকে কোনো ঋণ দেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। জার্মান পত্রিকা ‘আলগেমাইনে জাইটুং-এ এই মর্মে সংবাদ ছাপা হয়েছে যে, বাংলাদেশের যুদ্ধ চালাতে গিয়ে পাকিস্তানের রফতানী এখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ এবং যুদ্ধ খাতে প্রচুর ব্যয়ের জন্য পাকিস্তান এখন আর্থিক দেউলিয়া দেশে পরিণত হয়েছে।