পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

192 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ৬ জুন, ১৯৭১ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন মুসলিম দেশের পত্রপত্রিকা সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার তেইশ বৎসর পরে এবারই প্রথমবারের মত সারাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে দুনিয়ার বিভিন্ন মুসলিম রাষ্টের পত্রপত্রিকায় যে সম্পাদকীয় নিবন্ধ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের প্রতি মুসলিম দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যান্ত আশা ও আনন্দের বিষয় যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে আমরা বিশ্ববাসীর আন্তরিক সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়ে আসছি।

  • সিরিয়ার আল-তাউরা’ পত্রিাকায় ২৭ শে মার্চ তারিখের এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছেঃ

পূর্ব বাংলায় সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায় এ কথা প্রমাণিত হচ্ছে যে পাকিস্তানের মিলিটারী শাসকগোষ্ঠী দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক অবস্থা ফিরে আসুক, এটা চাননি। তারা এটাও চানটি যে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে হোক।

  • তুরস্কের দৈনিক ‘জমহুরিয়াত’-এ ২৮ শে মার্চ তারিখের এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছেঃ

পশ্চিম পাকিস্তান তাদের কামান-বন্দুক দিয়ে পূর্ব বাংলাকে দমন করতে শুরু করেছে কিন্তু একটু আগে বা পরে পূর্ব বাংলা তার অধিকার অর্জন করতে সক্ষম হবে।

  • মালয়েশিয়ার দৈনিক ‘উতশান মালয়েশিয়া’ পত্রিকার ৩০ শে মার্চ তারিখে এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছেঃ

পাকিস্তানের মিলিটারী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বয়ং বুঝেছেন যে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পূর্ব ংলার জনগণের অবস্থা ও ভাগ্যের প্রতি ক্রমাগত অবহেলা ও উদাসীন মনোভাব পোষণ করায় বাংলাদেশে গণ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। বর্তমানে ইয়াহিয়া খান পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে, পূর্ব বাংলা কোন স্বাধীন দেশের অংশ নয়- বরং পূর্ব বাংলাকে বলা হয় পশ্চিম পাকিস্তানের কলোনী।

  • সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের আরবী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘রোসে আল-ইউসুফ-এর এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছেঃ

অনেক পর্যবেক্ষক এই ভেবে অবাক হয়েছেন যে, পূর্ব বাংলা এতদিন পরে কেন স্বাধীনতা চাইল! পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি লোক বাস করে পূর্ব বাংলায়। অথচ পাকিস্তানের মোট সাধারণ বাজেটের ৪ ভাগের ১ ভাগের চাইতে কম অর্থ ব্যয় হয় পূর্ব বাংলায়। পাকিস্তানের উন্নয়ন সংক্রান্ত বাজেটের তিন ভাগের একভাগের চেয়েও কম টাকা ব্যয় হয় পূর্ব বাংলায়। আর বৈদেশিক সাহায্য ও রপ্তানিজাত আয়ের মাত্র ৪ ভাগের ১ ভাগ পায় পূর্ব বাংলা। সরকারি চাকুরির মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ এবং সামরিক বিভাগীয় চাকুরির শতকরা মাত্রা ১০ ভাগ পেয়েছে পূর্ব বাংলার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার সময় দেখা গেছে যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বাংলার চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিটি বেশী নজর দিয়েছে।