পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

194 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সশস্ত্র ধ্বংসাভিযান চালিয়ে সব নস্যাৎ করে দিলেন। ভাইয়ে ভাইয়ে এই হত্যাকাণ্ড সৃষ্টির অপরাধে ইয়াহিয়া খানকে ভবিষ্যৎ বংশধররা কোনদিন ক্ষমা করবে না। (আবুল কাসেম সন্দ্বীপ অনুদিত) মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের কবিতা ১১ জুন, ১৯৭১ পচিশে মার্চের রাত্রির সুপ্তি থেকে সমগ্র বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। মধ্যরাতের দুঃস্বপ্নে অকস্মাৎ কেদে উঠেছিল ঢাকা নগরী। সে কান্না মায়ের জঠর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নবতর জন্মলাভের কান্না। বিশ্বাসঘাতকতার খোলস ছেড়ে নতুন সূর্যোদয়ের মতই স্বাধীন বাংলা পূর্বদিগন্তে উদ্ভাসিত হয়েছে। তার মুক্ত আলোকচ্ছটা সূর্যকরের মতই সত্য আর স্বচ্ছ। সুজলা সুফলা বাংলা আজ বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত কৃষাণের লাঙ্গল রূপান্তরিত হয়েছে সংগ্রামী হাতিয়ারে, শ্রমিক তার হাতুড়ি ছুড়ে দিয়েছে গ্রেনেডের মত, দেশের অগণিত জনগণ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার পোষ্টার লিখছে। এ কোন বাংলাদেশ। এই অচিন্তনীয় বাংলার রূপ কি পৃথিবীর মানুষ কখনও দেখেছিল? হয়ত দেখেনি, কিন্তু বাংলার কবিতার চিরকালীন আবহমান বাংলাকে অনুভব করেছেন এই বিস্ময়ময় রূপের মধ্যে। তাই বাংলার রণক্ষেত্রে আজ তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং তাদের দেশের একান্ত প্রিয় কবিদের কাব্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একদিকে হিংস্র বন্য পশুদের নির্মম অত্যাচারের যথাযোগ্য প্রত্যুত্তর, অন্যদিকে স্বদেশের প্রতি গভীর আবেগময় ভালবাসা। এই ভালাবাসার প্রতিভাস ফুটে উঠেছে এ দেশের কবির সৃষ্টিতে। মসি এখানে অসির সহযোগী। বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনগণ জীবনানন্দের অনুভবে একান্ত হয়ে উচ্চারণ করেনঃ “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুজিতে যাই না আর।” ভাসিয়ে এদেশের মানুষ আত্মশুদ্ধ হন। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব ভাষা ও ভাবের আত্মীয়তার মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বের মুক্তি আবিষ্কার। এ জন্যেই একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষার আন্দোলন নয়; একুশে ফেব্রুয়ারি আজকের স্বাধীনতা-বাসনার প্রথম প্রজুলন। দেশের প্রতি কবিদের আত্মনিবেদনে দেশের মানুষ সমান অংশীদার। তাই এদেশের মানুষের কাছে একজন সৈনিক এক একজন কবি পাশাপাশি পথ চলেন। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালেবাসি- এ কেবল জাতির সঙ্গীত নয়, জাতির হৃদয়-সঙ্গীত। অন্তরের প্রতি প্রান্তে স্বদেশের মাটির প্রতি কবির যে সংবেদন, মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের প্রতিটি বুলেটে সেই চিরন্তন সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আর তাই অকুতোভয় বাঙালী সৈনিকের কাছে মৃত্যুকেও মৃত মনে হয়, তুচ্ছ মনে হয়। বাংলার জাতীয় জাগরণে জসীম উদ্দীন কেবল কবি নন, তিনি সংগ্রামের সৈনিক ও বটে। মানুষের প্রতি অপরিসীম সহানুভূতি তাকে নিয়ে এসেছে সংগ্রামী জনতার পুরোভাগে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মূর্ত প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে তাই তিনি বলেনঃ