পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

195 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দম্ভ-স্ফীত ত্রাস, হানে বিষাক্তা শ্বাস। তোমার হুকুকে তুচ্ছ করিয়া শাসন ত্রাসন ভয় আমরা বাঙালী মৃত্যুর পথে চলেছি আনিতে জয়।’ আমাদের স্বাধীনতার মূল উদ্দীপনা আহৃত হয়েছে দেশের প্রতি উৎসারিত মমত্ববোধ থেকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রেও এই স্বদেশপ্রীতিই হচ্ছে আসল হাতিয়ার। দেশকে ভালোবাসার অপরিমেয় আগ্রহ এক নতুন রণশক্তির সৃষ্টি করেছে যে মানবিক মূল্যবোধহীন বর্বর পশুশক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যুত্তর দিতে সক্ষম। এখানেই বাংলাদেশের কবিরা হয়ে উঠেছে মুক্তিসেনার পরম সহায়ক। যুদ্ধ এক ধরনের হিংস্রতা সন্দেহ নেই, কিন্তু জীবন দেয়া-নেয়ার গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টিতে মুক্তিবাহিনীর প্রত্যেকটি সৈনিকের মুখে যে নির্ভীক সাহসিকতার ঔজ্জ্বল্য প্রকাশমান তার প্রেরণা বাংলা মায়ের মুখ। দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসই যেখানে অস্ত্র, সেখানে পশুশক্তির পরাজয় অনিবার্য। হাসান হাফিজুর রহমান এমনিতর অস্ত্রই আবিষ্কার করেছেন। যা জনগণের চোখের দৃষ্টি আর বুকের ভাষা থেকে উৎসারিত। ‘অনাদি অটল দুর্গজয়ী অস্ত্র পাবে কোথায়? মোহাচ্ছন্ন চোখে তোমার পড়ে না কিছুই। দ্যাখো না লক্ষ্য কোটি তীব্র চোখ ভিন্ন আলো ফেলে, কণ্ঠ তাদের আকাশ বাতাস চেরে? অস্ত্র আমার তাদের চোখ অস্ত্র আমার কোটি কণ্ঠের ভাষা’। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরিণতি আজ অতি স্পষ্ট। ইতিহাসের অনিবার্য গতিতেই আসন্ন হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। মানুষ মারার জন্যে বুলেটের সাথে অমানবিক জিঘাংসার প্রবৃত্তি থাকা প্রয়োজন, কিন্তু পশু হত্যার জন্যেই চাই মানবিক দৃঢ়বদ্ধ চেতনা। এ বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতি এখন রক্তক্ষয়ী আপোষহীন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। হাজার মাইল দূর থেকে নিয়ে আসা ভাড়াটে হানাদল বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত হয়ে উঠেছে। কোন নৈতিক মনোবলশূন্য সামরিক শক্তি যত বিশালই হোক না কেন, আত্মিক বলে বলীয়ান নিরস্ত্র মানুষের শক্তিও তার চেয়ে কম নয়। এহেন মনোবলের বোধ পাকিস্তানের শূন্যগর্ভ বুলিতে কোনকালেই জাগ্রত করা সম্ভব নয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের কবিরা বাঙালীর আত্মিক প্রেরণার সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে শত্রর মোকাবিলা করছে। রক্তের ফিনকিতে লাল হয়ে যদিও বাংলাদেশ ধুয়ে যাচ্ছে, তবু মহান মুক্তিসেনারা আজ মৃত্যুভয়ে ভীত নয়। তাদের মনের নির্ভীক প্রতিরূপটিকে ব্যক্ত করে এদেশের কবি বলেনঃ মৃত্যুকেও মৃত মনে হয় আজকাল, কারণ মৃত্যুতে মোমবাতির শিখাটি নড়ে না,