পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

196 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শোকধ্বনির মধ্যে গভীর আনন্দে খোল করতাল বাজে অন্ধকারে আলো ওঠে জুলে স্বপ্লের রং গুড়ো হলে কারা তবু আঁকতে চায় ছবি বারুদের পোড়া গন্ধ শুকে স্বদেশের ঘ্রাণ পায়, প্রাণে নেয় আশ্বাসের বায়ু দুঃখ ক্লান্তি ভীতি নেই, যেহেতু তাদের প্রত্যেক দুঃখের সঙ্গে আনন্দ ঘুমায় অবিরত, যেহেতু এখন মায়ের জঠরে কাঁদে বাংলাদেশ নবতর জন্মের পুলকে। ইতিহাসের অমোঘ ধারাকে লংঘন করার সাধ্য পাশব শক্তির প্রতিভূ ইয়াহিয়া খানের নেই। বাংলাদেশ এখন সেই মহাজাগতিক সত্যের ধারায় স্নাত হয়ে মুক্ত সত্তার প্রতীক্ষায় দিন গুণছে। এ পৃথিবীর রণরক্ত সফলতা সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়’- জীবনানন্দের এই চিরন্তন বাণী মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করে স্বাধীনতা পরম সত্যের মাঝখানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। সেই অলখ অরুণোদয়ের প্রতীক্ষায় আমরা নিদ্রাহীন, ক্লান্তিহীন। জীবনকে ভালবাসি বলেই আমরা বরণ করি মৃত্যুকে। (কামাল মাহবুব’ ছন্দনামে মাহবুব তালুকদার রচিত) রণ দামামা ৬ জুলাই, ১৯৭১ “এসো শ্যামল সুন্দর, আনো তব তৃষ্ণাহারা তাপহারা সঙ্গসুধা গ্রীষ্মের খরদাহ তাপক্লিষ্ট রুদ্র রূপের পর বর্ষা তুমি এসেছে। তোমার রুমঝুমঝুমু নৃত্য আমার হৃদয়ে ফেনিল তরঙ্গোচ্ছাস তোলে না। রুদ্র দাহনের পর তোমার শ্যাম-সুন্দর সরল আগমন। আজ জনমত সঞ্জীবিত তোমার রসসিঞ্চনে। হারান সম্পদ বিয়োগব্যথার ত্রিধরা প্রকৃতি আজ শীতল হল। গুরু গুরু মেঘ গুমরি গরজে গগনে গগনে। সেই সাথে গরজে আমার উত্তাল তরঙ্গ বিষুব্ধ মন। আজ হৃদয় দুর্জয়, অশান্ত, টালমাটাল। ঘন বর্ষার বাংলার ঘুমন্ত রানীল তন্দ্ৰালু স্বপ্নাচ্ছন্ন বেশ ঝমঝম করে একটানা করছে। ঝরে পড়া জলের সমুদুরে আরও নতুন ধারা পড়ে বাঙ্ময় হয়ে উঠছে। আমার হৃদয় সমুদ্রেও তেমনি বিক্ষুব্ধ কল্লোলধারা অশান্ত উৰ্মিমালা উখিত-পতিত হচ্ছে ভীমবেগে। আজ জনতা সাগরে জেগেছে উর্মি টালমাটাল’। স্বাধীন বাংলায় বর্ষা এসেছে নতুন জাগরণের বাণী নিয়ে, উত্থানের মন্ত্র নিয়ে- ঘুমপাড়ানী গান যেন নয় শিকল-ছেড়া বাঁধনহারার গান গেয়ে। তরুণ অরুণের বহ্নিশিখার মতো প্রতিজ্ঞার ভাস্বরতা নিয়ে।