পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

197 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হৃদয়-বারিধি তীরে সে আহবানের অনুরণন। নতুন নতুন শপথের দীপ্ত প্রতিভাস, নবীন প্রত্যয়ের সুরে ঝংকৃত অসংখ্য প্রতিজ্ঞার মালা হৃদয়কে আরও কঠিন, আরও ভৈরব-রুদ্র করে তুলছে। বরষার মন্দ্রার মঞ্জরী উত্তরীয় আর হৃদয়পদ্মের কোমল পাপড়িকে আন্দোলিত করে না, বরং নব উচ্ছাসে হৃদয়ের ঘুমন্ত বিদ্রোহী সত্তাকে জাগিতে তোলে। আজ প্রাণের রুদ্রবীণায় একটি সুরের লয় মিলে-মুক্তির সুর, স্বাধীনতার সুর। রিমঝিম সুরের ঐকতান হৃদয়ের নিকুঞ্জবনকে স্বর্ণমদিরায় অসল-উতল ঘুম আর্দ্র করে তোলে না, বরং বিসুভিয়সের সুপ্ত লাল লাভা উদগীরণ করে। বর্ষার কলকল্লোল বারিধারা, ক্ষীণকায়া স্রোতস্বিনীর উদম কলহাস্য, তাল-তমালের শিহরণ এখন আর হৃদয়ের পেলবতন্ত্রীতে সুন্দরে ঝঙ্কার তোলে না বরং দুরন্ত দুর্দম কালবোশেখীর প্রলয়বিষাণ বাজায় হৃদয়মধ্যে। কদম্ব-কেতকী-কামিনী আর কুমুদ-কহলার অনুপম অনাবিল সৌন্দর্যের মধ্যে দেখি ভয়ঙ্কর সুন্দরের প্রতিভাস। স্ফীতকায়া নির্বারিণীর সলিল-উল্লম্ফনে রক্তের ফিনকি চমক দিয়ে যায়। বজ্রামানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ়ের মালায় একটি রক্তকবরী গেথে দেই। যেন এক শপথের গুচ্ছ শহীদী রক্তের সিক্ত হয়ে নতুন সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করছে। বিজলী চমকের ঝিলিকে সে প্রত্যয় আরও প্রোজ্জ্বল, আরও দেদীপ্যমান হয়ে ওঠে। মেঘমল্লার রাগে নতুন করে বাজুক রণদামাম- ‘জয় নিপীড়িত প্রাণ, জয় নব উত্থান’। (দিলীপ কুমার ধর রচিত) কথিকা ১৩ আগষ্ট, ১৯৭১ ২৪ বছর পরে আজ ১৪ই আগস্টে মনে পড়ছে আজ থেকে ২৪ বৎসর আগেকার দিনটি কথা। সেদিন কি উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশ, আর প্রাণদপ্ত ছিল বাংলার মানুষ। সারাদেশে কাগজের রঙিন পতাকা আর মালার ছড়াছড়ি। আলোয় আলোয় সারাদেশ ঝলমল। আমরা স্বাধীন হয়েছি, এবার আমাদের দুঃখ ঘুচবে। বিদেশী শাসন, জমিদারের অত্যাচার, মহাজনের শোষণ আর সামাজিক অসাম্যের হাত থেকে রেহাই পাবে বাংলার মানুষ। সারাদেশের মানুষ অন্তরের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে বরণ করে নিল ১৪ই আগষ্টের ভোরের লগ্নটি। তারপর প্রতিবছর ১৪ ই আগষ্ট ঘুরে ঘুরে এসেছে। বাংলার মানুষ তাদের ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশ্যা নিয়ে প্রতিবছর ১৪ই আগষ্টের ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। ভেবেছে, যে দিনগুলো চলে গেলো সে এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। এবার নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুত নতুন জীবনের বাণী বহন করে আসছে ১৪ই আগষ্ট। কিন্তু প্রতিবারই ভুল ভেঙ্গে গেছে বাংলার মানুষের। তার অতি কাজেক্ষয় জীবনের প্রতিশ্রুতি বহন করেন এলো না কেন ১৪ই আগষ্ট। বিদেশী শাসনের পরিবর্তে তার ঘাড়ে চেপে বসলো পশ্চিম পাকিস্তানী শাসন। ১৪ই আগষ্ট বাঙালীর জন্যে মুক্তি নিয়ে এলো না কোনবার। শুধু তীব্রতর হলো শোষণ জমিদারের অত্যাচার আর মহাজনের শোষণের চাইতে পশ্চিম পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র এবং পুঁজিপতিদের বর্বরতম অত্যাচার ও তীব্রতর শোষণে তারা জর্জরিত হয়ে উঠলো। সামাজিক অস্বীকৃতি আর অনাচারে তাদের জীবন হয়ে উঠলো দুঃসহ। এই শৃঙ্খলিত শাসন আর সামাজিক অবিচারের হাত থেকে মুক্তি চেয়েছে বাংলাদেশের নিপীড়িত জনসাধারণ। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকবার প্রতিটি উপকরণের জন্যে তাদের লড়তে হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্র বাংলাদেশের প্রতিটি দাবিকে অস্বীকার করেছে, আর প্রতিটি দাবি আদায়ের জন্যে বাংলার মানুষকে লড়তে হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের পর বাংলাদেশের ইতিহাস পশ্চিম পাকিস্তানী