পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

199 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কোন গুপ্ত অবস্থানের খবর পেয়ে। অস্ত্র তার দেহের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো কিছুক্ষণ পরেই গর্জন করে উঠবে প্রচণ্ডভাবে...। এখন প্রশ্ন-গেরিলা কে? তাকে দেখতে কেমন? কী এমন তার মাঝে আছে যা তাকে সাধারণের থেকে স্বতন্ত্র করে তোলে? প্রথম প্রশ্নের একমাত্র উত্তর : বর্তমানে বাংলাদেশে গেরিলা সবাই। গেরিলা যে কেউ হতে পারে, সে ছাত্র হোক অথবা শিক্ষিত হোক। কৃষক শ্রমিক মজুর মালিক যে কেউই গেরিলা হতে পারে। জীবিকার জন্যে যে -যে পেশায় নিয়োজিত আছে- যেমন মুদি দোকানী, হোটেল বা রেস্টুরেন্টের মালিক, কর্মচারী, রিকশাঅলা, বুদ্ধিজীবী- সবাই গেরিলা। গেরিলা শব্দের অর্থ আরো ব্যাপক হতে পারে। যেমন শত্রনিধনে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদেরই শুধু নয়, বরঞ্চ যারা সক্রিয় গেরিলাদের প্রকারান্তরে সাহায্য করছে গেরিলা বলতে তাদেরকেও বোঝায়। বাংলাদেশের মা-বোনেরা যারা মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের খাবার দিয়ে বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে সাহায্য করে অশীতিপর বৃদ্ধা, বেঁকে যাওয়া কোমড়ের ভাঁজে মুড়ির ধামা আর লোলচর্ম হাতে জলের বালতি নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনীর জন্যে অক্লান্ত স্মিত মুখে। সেই অর্থে এমন বাংলাদেশের আবলবৃদ্ধবনিতা, কুলি-মজুর, কৃষক-শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী সবাই গেরিলা’। (শামীম চৌধুরী রচিত) আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মহিলা ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ২৩ বছর ধরে নিরপরাধ নিঃসহায় বাঙালীর উপর যে অত্যাচার অবিচার আর নির্যাতন চলে আসছিল সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বাঙালীর দানাবাঁধা ক্ষোভ এবার ফেটে পড়েছে ’৭১-এর ২৫শে মার্চে স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঙালীর উপর অস্ত্র ব্যবহার করছে। রক্তপিপাসু নরপিশাচরা বার বার রক্ত পান করছে। কিন্তু এবার বাঙালীর সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে, তাই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ স্বাধীনতাকামী বাঙালী তার স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে এবার হাতে অস্ত্র নিতে শিখেছে- হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। আর তাই বাংলার তরুণ যুবকরা দলে দলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর তরুণ যোদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে সাহস আর কৃতিত্বের সহিত প্রচুর শক্রসেনা খতম করে অস্ত্রের ভাষায় অস্ত্রের জবাব দিচ্ছে। আজকের আমাদের মুক্তিসংগ্রাম বাংলার সাড়ে সাত কোটি নরনারীর মুক্তিসংগ্রাম। বাংলার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি আন্দোলনের এ ধারা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। মেয়ে-পুরুষ নির্বিশেষে অকাতরে এ সংগ্রামের সাফল্যের জন্য প্রাণ দিচ্ছে। বাংলার সামগ্রিক জনতার অর্ধাংশ যে নারী তারাও আজ পিছিয়ে নেই। তারও স্বাধীনতা-চেতনার পরিস্ফুটন আজ আমরা আমাদের মুক্তসংগ্রামে দেখতে পাই। তাই দেখতে পাই ইতিহাসের পাতায় বীরাঙ্গনা খাওলা, চাঁদ সুলতানা থেকে শুরু করে জামিলা বোখারদ, প্রীতিলতা