পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

203 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আমরা লড়ব বৈকি। যতদিন একটি হানাদার সেনা (আশ্চর্য, এগুলো আবার ধর্মে মুসলমান) আমাদের জন্মভূমির মাটির উপর থাকবে ততদিন আমাদের সংগ্রামের বিরতি নেই। বৃটিশের শিকল ছিড়ে আমরা গোলামির নতুন জিঞ্জির পরেছিলাম- এতদিন পশ্চিমের শাসকগোষ্ঠী যাকে ইসলামী জেওর বা অলঙ্কার বলে জাহির করেছে। সেই জিঞ্জির ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে। আমার আর ধোঁকাবাজির শিকার হবো না। আমরা স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব- যেখানে শোষণ চিরতরে নির্বাসিত- যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজের মেহনতের দাম পায় যথাযথ মর্যাদায়- যেখানে জাগতিক অসহায়ত কারো মনুষ্যত্বের বিকাশ-পথে বাধা নয়। আমরা গড়বো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পমুক্ত শ্ৰেয়বোধ প্রিয়বোধে দীপ্ত খাড়া শিরদাড়া নাগরিকের কলকণ্ঠস্কৃত নতুন বাংলাদেশ। জয় বাংলা । (শওকত ওসমান রচিত) যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ও বাংলার নারী ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গত ২৫শে মার্চ রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশে যে আন্দোলনের শুরু হয়েছে, সে আন্দোলন আমাদের মুক্তির আন্দোলন, সে আন্দোলন আমাদের বাঁচার আন্দোলন, স্ব-অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। বর্বর জঙ্গশাহী সুদীর্ঘ ২৪ বছর ধরে আমাদের বুকের রক্ত শোষণ করে আমাদের সোনার বাংলাকে নিঃস্ব করে তার বুকে মেরেছে ছুরি। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে তারা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। আমাদের শস্য-শ্যামলা মাকে তারা পরিয়েছে শ্বেত বসন, মাঠের ফসলে জঙ্গীশাহী বিমান থেকে ফেলেছে বিষ। আমাদের ঐতিহ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বৃদ্ধ অধ্যাপকদেরও তারা রেহাই দেয়নি। বিখ্যাত দার্শনিক ডঃ গোবিন্দ চন্দ্রদেবকে বিছানা থেকে পথে টেনে এনে জঙ্গীশাহী তাঁর বুকের উপর করল বেয়নেট চার্জ। এমনি করে মারা হয়েছে মনিরুজ্জামানকে ও আরো অনেককে। জগন্নাথ হল, ইকবাল হলের ছাত্ররা রাত ১১টার দিকে নিদ্রামগ্ন ছিল। সেই অসস্থায় তাদের উপর চালান হয়েছে মেশিনগান। ঘুম থেকে তারা উঠতে পারেনি। যখন তাঁরা পড়াশুনা করে ঘুমিয়েছিল তখন তাদের মনে ছিল কত আশা, কত স্বপ্ন। কিন্তু না, তারা সেই যে ঘুমিয়েছিল- সে ঘুম তাদের আর ভাঙ্গেনি। তারা আর ঘুম থেকে ওঠেনি, আর উঠবেও না কোনদিন। রোকেয়া হলে রাত ১২টায় জুলিয়ে দিল আগুন। ঘুমন্ত হল আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ল। আরো কত হাজার হাজার মানুষকে এই হিংস্র জানোয়ারদের বর্বরতার শিকার হতে হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। ভাবতে পারেন? কলপনা করতে পারেন? হিংস্র পশুর মত টিক্কা খান ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের উপর ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে। দম্ভভরে বলেছিল জঙ্গীসর্দার ইয়াহিয়াকে “আমার হাতে ক্ষমতা দাও, আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ঠিক করে দেব।” হ্যাঁ, নেমেছিল সে তার সবটুকু ক্ষমতা নিয়ে, কিন্তু পেরেছিল কি? পারেনি, পারবেও না। ২৪ ঘণ্টা অতীত হয়ে কতদিন পার হয়ে গেল তবুও পারেনি। শেষ পর্যন্ত হালে পানি না পেয়ে হাল ছেড়ে পালিয়ে গেল। এবার আর এক মিরজাফর