পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

205 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড করার জন্য তারা সব সময়ই জনগণের স্বার্থকে নিদারুণভাবে বলি দিয়ে গেছে। অপরদিকে স্বীয় স্বার্থের প্রতি নজর দিয়ে যারা শোষিত জনগণের অন্তরের কথাকে তুলে ধরতে চেয়েছিলো, তাদের ভাগ্যে জুটেছে সীমাহীন অত্যাচার, লাঞ্ছনা ও চরম দারিদ্র। বিগত চব্বিশ বছরে বাংলার জনগণের প্রিয় মুখপাত্র দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও জনতার আরো কয়েকটি পত্রিকা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সে সমস্ত দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের সেদিনকার সে দুরবস্থা কোনদিনই ভোলার নয়। তবু তারা হার মানেনি কোনদিন ষড়যন্ত্রকারীদের কাছেসকল প্রকার দুঃখ-দারিদ্র, জেল-জুলুম, অন্যায় ও নির্যাতনের কাছে। সত্য ও ন্যায়ের পথে তাঁরা ছিল একাত্ম এবং সোচ্চার। অগ্নিক্ষরা ছিল তাঁদের লেখনী। সরকারী বিধিনিষেধ, জেল-জুলুম এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াও পশ্চিমা শাসক ও শোষক পদলেহী বিছুসংখ্যক এদেশীয় পত্রিকার মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক তাঁদের প্রভুদের চেয়েও কাণ্ডজ্ঞানহীনতার ক্ষেত্রে অনেক বেশী বর্বরতার পরিচয় দিয়েছেন।........ তাছাড়া স্থাবর ও অস্থাবরসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী হয়েছে। মালিকপক্ষ ছাড়াও বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কয়েকজন লোক অপ্রয়োজনীয় আগাছার মতো সম্পাদকের আসন গেড়ে বসে আছেন- যারা সবসময়ই জাতীয় স্বার্থ, সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে সর্বপ্রকার শোষণ, শাসন ও নির্যাতন চলাকালেও একতা, সংহতি ও ইসলামের জিগীর তুলে বাঙালী জাতির ন্যায্য অধিকারকে নির্দয়ভাবে চাপা দিয়ে গেছেন।....... এছাড়া বাংলাদেশের বাইরে- পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় সব সম্পাদক এবং সাংবাদিকই পাকিস্তান টাইমস’ এর দীর্ঘস্থায়ী সম্পাদক জেড, এ, সুলেরীর চেয়ে গুরুত্বের দিক থেকে কোন অংশেই কম নয়। কলা ও ভণ্ডামির আশ্রয় নিতে কোনদিন কার্পণ্য করেননি। সারা বাংলাদেশ আজ একটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দিকে দিকে জুলে উঠেছে মুক্তির লাখো কোটি মশাল। তার আগুন স্ফলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার দিকে দিকে। স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অগণিত বাঙালী শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবীর দল। তারা প্রত্যেকেই আজ এক-একটি মুক্তিসেনায় পরিণত হয়েছে। জীবনকে বাজি রেখে তারা লড়ে যাচ্ছে মুক্তির জন্য। দুর্জয় সাহসে অপ্রতিরোধ্য গতিতে শত্রর উপর আঘাতের পর আঘাত হেনে চলেছে। সে আক্রমণে পশ্চিমা জঙ্গীশাহীর তখতে তাউস কেপে উঠেছে। এ মুহুর্তে কি করছেন শত্রকবলিত আমাদের বাংলাদেশের সাংবাদিকরা? কি আজ তাদের নৈতিক এবং ঐতিহাসিক দায়িত্বে? বিবেকসম্পন্ন মননশীল সেসব সাংবাদিককে কোনকিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, বাংলাদেশের বিগত চব্বিশ বছরের রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাসে তাদেরও ছিল একটি সংগ্রামী ভূমিকা। কিন্তু আজ যখন তারা সম্পূর্ণ পরাধীন-বিবেক যেখানে বিধিনিষেধের বাহুল্যে ক্ষতবিক্ষত- চোখের সামনেই যেখানে ২৫শে মার্চের পর একমাত্র বাঙালী সংবাদ সরবরাহ সংস্থা বলেই Eastern News Agency- কে অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ENA ছাড়াও দি পিপল, সংবাদ, স্বরাজ, বাংলার মুখ, একতা, স্বাধিকার, বাংলার বাণী, গণশক্তি, গণবাণী, হলিডে, এক্সপ্রেস ও আরও অনেকগুলো দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বাঙালী জাতীয়তাবাদ, আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও তাদের সংবাদকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এহেন অন্যায়কে তারা কিভাবে সহ্য করে যাচ্ছেন? শুধু তাই নয়- হানাদার এহিয়া সরকারের সর্বৈব মিথ্যা সংবাদ কিভাবে তারা দিনের পর দিন প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন? আমরা জানি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা। তবুও বলবো, আজ যারা বাংলাদেশের নির্যাতিত ও শোষিত জনগণ এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য