পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

210 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আজ যারা যুদ্ধ করছে তারা কি কোনদিন যুদ্ধ করেছিল? তাদের কি যুদ্ধের কোন অভিজ্ঞতা ছিল? তাদের হাতে কি আগের থেকেই অস্ত্র ছিল? এর উত্তর হচেছ- না। কিন্তু তবু কেমন করে যুদ্ধ চলছে, কেমন করে অস্ত্র এলো? এর উত্তর হচ্ছে- যুদ্ধ করতে চাইলে,স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে চাইলে অস্ত্র এসে যায়, যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও হয়, যুদ্ধ জয়ও হয়। আলজিরিয়া তর প্রমাণ, ভিযেতনাম তার প্রমাণ। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের ইচ্ছাটাই বড় কথা। আমাদের যোদ্ধারা, যুবকেরা বার বার বলেছেন যুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত করবো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ঘটনাবলী বিচার করছেন, সে ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন আকর্ষণ নেই। তাঁরা বলছেন, আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো, যাচ্ছি। আমাদের নেতারাও সেই কথা বলেছেন। কারণ, তাছাড়া বাংলাদেশের শোষণ বন্ধ হওয়ার আর কোন পথ খোলা নেই। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ শোষিত হয়েছে। তাদেরকে শোষণমুক্ত করতে হলে যুদ্ধই একমাত্র পথ। শেখ মুজিব শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার একমাত্র নাম যুদ্ধ। আমাদের যুবকরা প্রাণ দিয়ে শোষণের সমস্ত পথ বন্ধ করে দিতে আজ বদ্ধপরিকর। দেশের মানুষ চায় বাংলাদেশের টাকা বাংলাদেশে থাকবে, আমরা সবাই সেই টাকা সমানভাবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবো। কেউ যেন বলতে না পারে, আমি আমরা ভাগ পাইনি, আমি ব্যথিত, আমি শোষিত। সুতরাং সেই মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের সংগ্রাম করে যেতে হবে, আমাদের যুদ্ধ করে যেতে হবে। এ ব্যাপারে যারা সাহায্য করবে তারাই আমাদের বন্ধু। ("জাফর সাদেক’ ছদ্মনামে মোহাম্মদ আবু জাফর রচিত) কয়েকটি ছবি- একটি ইতিহাস ৩ নভেম্বর, ১৯৭১ - কি ভাই, কি দেখছেন? ও, ছবিগুলো? আচ্ছা দেখুন। একের পর এক ছবিগুলো দেখে যাচ্ছিলাম আমি। প্রথম ছবিটি একটা তুলসী গাছের। অবশ্য এতে দেখার কিছু নেই। শুধু উপলব্ধি ছবিটি তোলা হয়েছিলো ১৩ই এপ্রিল। ময়মনসিংহ শহরের কোন এক হিন্দুপারা থেকে। ক্ষতবিক্ষত একটি দোতলা দালানের পাশে দেখা যাচ্ছে গাছটি, বোবার মতো দাঁড়িয়ে। বাড়িতে কোন লোকজন নেই। হয়তো তাদের সবাই প্রাণ হারিয়েছে পাকস্তানী সৈন্যদের মেশিনগানের গুলিতে। অথবা সবাই প্রাণভয়ে পালিয়েছে ওপার বাংলায় শরণার্থী হয়ে। ছবিটি দেখে মনে হচ্ছিলো, কেউ আর মাথা নীচু করে, নতজানু হয়ে পূজা দেবে না সকাল -সাঁঝে-তুলসী তলায় বসে প্রার্থনা জানাবে না হরি-মাধবের কাছে আর কোনদিন। দ্বিতীয় ছবিটি কোন এক নবদম্পতির-মুখোমুখি অবস্থায়। তবে জীবিত নয়, মৃত। হাতে মেহেদীর কাঁচা রং। তরুণের মুখটা থ্যাবড়া হয়ে গেছে-চেনার জো নেই। তরুণীর বুকের পাঁজর ভেঙ্গে গেছে-টকটকে লাল রক্তিম কলজেটা দেখা যায় শুধু! এদের বিয়ে হয়েছিলো ২৪শে মার্চ। আর ছবিটি তোলা হয়েছিলো ২৬শে মার্চ-ঢাকা মিটফোর্ড থেকে। ২৫শে মার্চ গভীর রাতের নির্জন নিস্তব্ধতায় এ নবদম্পতির মাঝে ছিলো এক মধুময় পরিবেশ। কিন্তু অকস্মাৎ গর্জে উঠলো পশ্চিমা বর্বর সেনাদের কামান। মুহুর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল ওরা। চিরদিনের মতো নিঃশেষ হলো ওদের পরস্পরের সকল চাওয়া-পাওয়া।