পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

214 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড পড়া শেষ হলো। আনুর মা ভাবীর চোখে থেকে টস টস করে জলে পড়ছে। “কেদো না ভাবী, আনু নিশ্চিয়ই ফিরবে। মন খারাপ করো না।” আনুর মা ভাবীকে সান্তনা দিতে গেলাম। “মন খারাপ না। খুশী লাইগতাছে। আনু আমাগো দেশের লাইগ্যা লড়তাছে। এর থাইক্যা খুশীর আর কী অইতে পারে। কারবালায় কাশেমের মা যুদ্ধে যাওনের আগে পাগড়ী বাইন্ধা দিছিলো। আমিও তারে নিজের হাতে কাপড় পরাইয়া দিছি। আনু আমার কাশেম।” চোখের জল মুছে ফেলে আনুর মা ভাবী হাসলেন। তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে একটা স্বগীয় দীপ্তি।............. (জেবুন্নাহার আইভি রচিত) মুক্তিসংগ্রাম ও বঙ্গ বীরাঙ্গনা ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ নারী জাতির ললাটে গৌরবের টিকা দিয়ে কবি নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন যুগে যুগে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারী প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী। আজকের যখন বাংলাদেশের এক অন্ধকারময় দুদিনে পশ্চিমা পশুদের বিতাড়নের জন্য দিকে দিকে আমাদের সংগ্রামী যুবকগণ জীবনকে তুচ্ছ করে সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন, তখন বাংলাদেশের মা-বোনেরাও এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পশ্চিম পাকের বর্বর পশুগুলো বাংলাদেশের মা-বোনদের ওপর যে পাশাবিক অত্যাচার করেছে মানবতার ইতিহাসে তার তুলনা নেই। বাংলাদেশের মা-বোনেরা এই অবমাননার কথা কোনদিন ভুলতে পারেন না। তাঁরা দেখেছেন তাঁদের সামনেই সন্তানদের কিরূপ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে- তাঁরা দেখেছেন তাঁদের স্বামীর করুণ মৃত্যু,স্বজনদের রক্তাক্ত নিধন। আর দেখেছেন অসংখ্য মা এবং কন্যার ওপর বর্বরতম পাশবিক অত্যাচার। আজো বোধ করি কয়েক হাজার মা-বোন পশুসৈন্যদের শিবিরে শিবিরে ছাউনিতে ছাউনিতে গ্রানিকর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা এই করুণ বেদনার কথা ভুলি নাই, ভুলতে পারি নাই। তাই বাংলাদেশের মা-বোনেরাও আজ সংগ্রামের পথকেই বেছে নিয়েছেন। নারীর স্থান যে শুধু ঘরে নয়, বাইরের জগতেও যে তার সমাজকল্যাণমূলক এবং দেশসেবার প্রচুর কাজ আছে, বাংলাদেশের জাগ্রত নারী সমাজ তা প্রমাণ করেছেন। আজকের মুক্তিসংগ্রামেও বাংলাদেশের ললনাগণ সেই কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে এগিয়ে এসেছেন। আমরা জানি, আমাদের কোন কোন রণাঙ্গনে অনেক উৎসাহী ছাত্রী আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে পাক-সেনাদের খতমের কাজে তাঁদের সংগ্রামী ভাইদের সাহায্য করছেন। কিন্তু নারীর পক্ষে শুধু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করাই আধুনিক যুদ্ধের বড় কথা নয়-নারীর পক্ষে আহত সৈনিকদের সেবার মাধ্যমে বাঁচিয়ে তুলতে সাহায্য করাও একটি বড় এবং মহান কাজ। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের বহু সক্ষম ছাত্রী ও মহিলা আজ এই সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের সেবায় আমাদের বহু সংগ্রামী বাঙালী উপকৃত হয়েছেন।