পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

219 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড অর্থ খুঁজে পেয়েছি আরও অনেক পরে- দীর্ঘ একুশ বছরের পর, ঢাকায়-গত ২৫শে মার্চের বীভৎস রাতে। একটি সংবাদপত্র অফিসের ছাদে বসে। আমাদের গায়ের ভিটের সেই ডালভাঙা সজনে গাছের চারপাশের অন্ধকার আর হঠাৎ হঠাৎ জুলে ওঠা জোনাকীর আলোর মধ্যে নয়, চারদিকে পাকিস্তানী বর্বরদের স্বয়ংক্রিয় রাইফফেল, মেশিনগান, মর্টার ও ট্যাঙ্কের গোলাগুলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমার বিধবা আপার ধরানো চুলোর চকবাজার, পিলখানা আর ফার্মগেটে হাজার হাজার ঘরে পাকিস্তানী বর্বরদের লাগানো ভয়াবহ আগুন দেখতে দেখতে। বেড়ানো আমার সেই শিশু আমিকে। দেখতে পাচ্ছিলাম প্যান্ট পরা নগ্ন গায়ের সেই চঞ্চল শিশু- তার মাথাটা ওরা গুলির আঘাতে উড়িয়ে দিয়েছে-কালো পীচের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তধারা -মাথার খুলির টুকরোগুলো- সেইদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের গাঁয়ের সেই দাদুভায়ের কান্নাভারাক্রান্ত কণ্ঠের পেরেছিলাম আমার সেই শিশু আমির ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার অর্থ। অতীতের এইসব টুকরো টুকরো স্মৃতির কথা ভাবতে অজান্তেই কখন যে হাতের এল-এম-জিটাকে ইস্পাতের সাঁড়াশির মতো দু’হাতে চেপে ধরেছিলাম তা আমার মনে নেই। (সাদেকীন রচিত) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন


ডিসেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বের ইতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। এর পটভূমিতে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত ও জীবনদানের করুণতম গাথা। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মত ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়নি। বিশ্বের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত নৃশংসতম ও বর্বর পাক-সৈন্যদের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের এ স্বাধীনতার সূর্যোদয় সম্ভবপর হয়েছে। অন্যান্য স্বাধীনতা আন্দোলনের মতই আমাদের মুক্তিযুদ্ধও প্রথমদিকে কতগুলি অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। যেমন- পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, প্রয়োজনীয় সামরিক প্রশিক্ষণের অভাব প্রভৃতি। এই সমস্ত কারণে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম স্তরে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চলেছিল। এই গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালানোর উদ্দেশ্য হলো শত্রকে বিভিন্ন দিক দিয়ে নাজেহাল করা। মূলত কতগুলি ফ্রন্টে বিভক্ত করে শত্রকে কোণঠাসা করে আনা গেরিলা যুদ্ধের মূলনীতি। এই ফ্রন্টগুলি হলো অর্থনৈতিক, সামরিক, মনস্তাত্ত্বিক প্রভৃতি। তাই নিতান্ত অনিচ্ছা ও ক্ষতি সত্ত্বেও শত্রকে কোণঠাসা করার জন্য বাংলাদেশ গেরিলাদের বিভিন্ন পুল, রেলওয়ে, ব্রিজ, কালভাট, প্রধান প্রধান সড়ক প্রভৃতির ধ্বংসসাধন করতে হয়। শত্রর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আঘাত হানার জন্যে মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের অনেক শিল্পকারখানাও নষ্ট করতে হয়। পরে শত্রমুক্ত করার তথা স্বাধীনতা অর্জনের চরম মুহুর্তে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নিশ্চিত পরাজয় বর্বর হার্মদ পাক-সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বহু বছর পিছিয়ে