পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

229 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আমরা আবার ফিরবো ঢাকায়। আমাদের নতুন স্বাধীনতা-দিবসে উৎসব হবে। প্রিয় পরিজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সেই উৎসব দিবসটি পালনের জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আমি জানি, আমার স্বপ্ন, আমার প্রতীক্ষা সফল হবেই। (আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত) প্রতিধ্বনি ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সেখানে অন্যায় সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, যেখানে মানুষ মানুষের রক্ত চোষে, যে দেশে রক্তের স্রোত বয়, পংকিলতা আর কুটিলতার শত আচ্ছাদন ভেদ করে সেখানেই ফুটে ওঠে নতুন সূর্য রক্তনদীর ঢেউ চুরমার করে দেয় শোষণ-নির্যাতনের যাতাকল। এটাই চিরন্তন সত্য। আর এই মহাসত্যের ভিত্তিইে এই নরম রোদের দেশবাংলায় আজ আমরা হয়েছি সৈনিক। পক্ষান্তরে পাক জঙ্গিশাহী বাংলাদেশে শোষণ, নির্যাতন ও নির্বিচার গণহত্যা চালিয়েও যখন আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারনি বরং বাংলাদেশের অর্থের ওপর নির্ভরশীল গোটা পশ্চিম পাকিস্তানই টুকরো টুকরো হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে, তখন গোয়েবলসীয় মিথ্যা প্রচারণায় বিশ্বজনমতকে ধোঁকা দেবার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে ইয়াহিয়া চক্র। বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় খুনী টিক্কার পরিবর্তে ডাক্তার মালিককে গবর্নর নিয়োগ এমনি একটি চক্রান্ত। এর পেছনে জঙ্গিশাহীর চারটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত বাঙালী গবর্নর নিয়োগ করে বাঙালীদের বিভ্রান্ত করে যুদ্ধকে দুর্বল করে দেয়। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন চালু হচ্ছে বলে বিশ্ব-বিবেককে ধোঁকা দেয়া। ডাক্তার মালিককে গবর্নর নিয়োগের তৃতীয় কারণটি হচ্ছেঃ ইয়াহিয়া খান একটা ব্যাপারে অত্যন্ত সুনিশ্চিত যে, বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার গবর্নর আজ হোক, কাল হোক মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের হাতে নিহত হবেই। সুতরাং জঙ্গিশাহীর কথা হচ্ছে, মরবেই যখন পশ্চিম পাকিস্তানী কেন, একজন বাঙালীই মরুক। চূড়ান্ত এবং প্রধান কারণটি হচ্ছে বেসামরিক প্রশাসনের মুখোশ ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিক অবস্থাকে চাঙ্গা করবার জন্য বৈদেশিক সাহায্যে বাগানো। কারণ বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জঙ্গিশাহীকে সাহায্যদান বন্ধ করে দিয়েছে। ডাক্তার মালিককে গবর্নর নিয়োগের দুরভিসন্ধি ধরা পড়ে গেছে বিশ্ববিবেকের কাছে। তাই বিশ্বের নামকরা পত্রপত্রিকা ও বেতারে এ ব্যাপারে ইয়াহিয়া চক্রের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মালিককে দখলীকৃত এলাকার গবর্নর নিয়োগের আসল উদ্দেশ্য বিদেশী সাহায্য বাগানো এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করা।” এ প্রসঙ্গে গাডিয়ান পত্রিকার মি. মার্টিন এডিনি বি-বি-সি থেকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় অসামরিক গবর্নর নিয়োগ করা হলেও সামরিক তৎপরতার কোন পরিবর্তন ঘটবে না।” অর্থাৎ “বাংলার নিরীহ জনগণের ওপর পাক বর্বরতা ঠিকই চলবে এবং বেসামরিক গবর্নর ডা. মালিক সামরিক বাহিনীর হাতের পুতুল মাত্র।”