পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

240 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ত্রিশ দিনের আনুষ্ঠানিক উপবাস পালনের শেষে যে ঈদ- সে ঈদকে আমরা কিসের মূল্যে আনন্দমুখর করে তুলবো, সে ভাবনা থেকেও আজ বাংলার মা-বোনরা নির্লিপ্ত নন। আমরা জানি, আমরা বিশ্বাস করি, পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার পশুশক্তি যেদিন আমাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মুল হবে, সেদিনই জমে উঠবে আমাদের ঈদের উৎসব। এ জন্য যতো ত্রিশ দিনই আমাদের কেটে যাক, আমরা করে যাবো সংযম-সাধনা। একটি স্বাধীন জাতির ভবিষ্যৎ হিসাবে যেদিন আমাদের বংশধররা আত্মপ্রতিষ্ঠার সুযোগ লাভ করবে, সেদিনই তো শুভ সমাপ্তি হবে আমাদের উপবাস পালনের। এবারে আমরা দেখেছি, পুজোপার্বনে আমাদের দেশ ঢাকা-ঢোল, সানাই-কাঁসা, শঙ্খঘণ্টায় মুখরিত হয়নি। কেবল কানে শুনেছি মুহুর্মুহু গোলাগুলির শব্দ। পূজামণ্ডপে রক্তচন্দনের লেপ দেখিনি, দেখেছি রক্ত। দুৰ্বত্ত হানাদার সৈন্যদের রক্ত। আমাদের দুঃসাহসী গেরিলা সন্তানদের হাতের অস্ত্র অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ করে চলছে এক একটি হানাদারের বক্ষদেশ। পুজোর আনন্দ আমরা উপভোগ করেছি মহিষাসুর বধের মাধ্যমে। বাংলা মাকে প্রত্যক্ষ করেছি জাগ্রত রণচন্ডীরূপে। আমাদের সন্তানরা দেশের সর্বত্র বিস্তৃত রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। আমাদের মা-বোনরা কেউবা তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার ভূক্ষা পালন করেছেন, কেউবা গৃহবাসে যুদ্ধকালীন কর্তব্য পালন করছেন। এ কর্তব্য বড় কঠোর, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মতোই বাংলার মাবোনরা আজ মেনে নিয়েছে জাতির এই মুক্তিযোদ্ধাকে। এ যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় তাই হয়ে উঠেছে সুনিশ্চিত। (বেগম উম্মে কুলসুম মুসতার শফি রচিত) দেয়ালের লিখন ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১ সব ভালো, যার শেষ ভালো। আর সব খবরের সেরা খবর শেষ খবর। সেই শেষ সংবাদটা কোন কোন ক্ষেত্রে আসলে দেয়ালের লিখন। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা, বিবেচক ব্যক্তিরা, বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিরা আগেভাগেই দেয়ালের লিখন পড়তে পারেন, পড়ে সাবধান হতে পারেন। দেয়ালের এই লিখনকে কেউ কেউ হয়তো বলবেন ভবিতব্য, আমি কিন্তু বলি- ইতিহাসের মার। মরণকালে যাদের বুদ্ধি নষ্ট হয়, সংকীর্ণ আত্মস্বার্থে যারা কাণ্ডাকাণ্ড, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে, তাদের দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দেয়ালের লিখন তারা পড়তে পারে না। ইতিহাসের চরম মারের হাত থেকে তাদের কেউ বাঁচতে পারবে না। ইতিহাসের মার দুনিয়ার বার। সেই মারের রকমটা কেমন, শুনবেন? ইতিহাসের সেই মারের চোটে দখলীকৃত বাংলাদেশে একটা নতুন ছুতোর-শিল্প গড়ে উঠেছে। ঢালাও কারবার চলছে সেই ছুতোর-শিল্পের। তার নাম হচ্ছে কফিন-শিল্প। ঢাকা, যশোর, ময়নামতি, ক্যান্টনমেন্টে দিনরাত তৈরী হচ্ছে শুধু কফিনের বাক্স। কফিনের বাক্সের যোগাড় দিতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে ছুতোর-মিস্ত্রিরা। পাক হানাদারদের কর্নেল জাঁদরেলরাই