পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

243 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কিন্তু দুর্ভাগ্য, “তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও, আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব” অথবা “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুজিতে যাই না আর” এই কবিতা শুনে যিনি বাংলার প্রেমে তন্ময় হতেন, তিনি আজ আর প্রিয় জন্মভূমি বাংলার থেকে দূরে-বহু দূরে শত্রর কবলে, দানব পশুর পাহারায় আবদ্ধবঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ রক্তস্নাত আর জননী বঙ্গভূমির সবচেয়ে আদরের দুলাল শেখ মুজিব আজ হৃদয়হীন পাষণ্ডের দেশ পাকিস্তানে বন্দীজীবনের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। আজো বাংলার মাটিতে “কাঁঠালপাতা করিতেছে ভোরের বাতাসে” এবং “সেখানে খয়ের ডানা শালিকের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে”- কিন্তু এই দৃশ্য দেখে যে মানুষটি সবচেয়ে অভিভূত হতেন, যে সিংহপুরুষ সমগ্র বাংলাদেশকে হৃদয়ের কাছে আঁকড়ে ধরতে হাত বাড়াতেন সেই শেখ মুজিব বাংলা থেকে বহু দূরে শত্রর কারাগারে শত অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে দিন অতিবাহিত করে চলেছেন। বাংলাদেশের কাছে এর চেয়ে দুঃখের, এর চেয়ে মর্মান্তিক বুঝি আর কিছুই হতে পারে না। বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে কি এক নিঃসীম শূন্যতা অনুভব করি, মনে হয় যতদূর যাই, নাই নাই সে পথিক নাই, মনে হয়ঃ প্রভাতের অরুণ আভাসে ক্লান্ত সন্ধ্যা দিগন্তের করুণ নিঃশ্বাসে পূর্ণিমায় দেহহীন চামেলীর লাবণ্য বিলাসে কাঙাল নয়ন যেথা দ্বার হতে আসে ফিরে ফিরে যতদূর চাই নাই নাই পথিক নাই। কিন্তু না। কে বলে শেখ মুজিব আমাদের মধ্যে নাই। তুমি যদি বাঙালী হও, তুমিও যদি বাংলাদেশের মাটি ও আলো-বাতাসকে শেখ মুজিবের মতই ভালবেসে থাকো, তুমি একবার চোখ নিচু করে তোমার হৃদয়ের দিকে চেয়ে দেখ- দেখবে শেখ মুজিব তোমার হৃদয়ে বাংলার প্রেমের প্রতীক হয়ে বেঁচে আছেন আর তোমার হৃদয়কে বার বার নাড়া দিয়ে আহবান করছেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তুমি যদি মুক্তিযোদ্ধা হও, সংগ্রামী বাঙালী হয়ে পাকিস্তানের হানাদার কুকুরগুলোকে বিতাড়নের শপথ গ্রহণ করে থাকো- তুমি তোমার হৃদয়ে শেখ মুজিবকে খুঁজে পাবে, তোমার বাহুতে অজেয় শক্তি হয়ে, তোমার বক্ষে দুর্বার সাহসের প্রবাহ হয়ে শেখ মুজিব সর্বদা জাগ্রত রয়েছেন। শেখ মুজিব বাংলার আমাদের সবার একান্ত নিকটে। পিণ্ডির কয়েদখানা শেখ মুজিবের দেহকে আবদ্ধ করে একটি বর্বর আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, বাংলাদেশের আজাদীর জনক শেখ মুজিবকে বিশ্বের কোন শক্তির সাধ্য নেই আবদ্ধ করে, কোন শক্তির সাধ্য নেই তাঁকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। তবু দুঃখ হয়, দুঃখে প্ৰাণমন সংকুচিত হয়ে আসে এই ভেবে যে, পাকিস্তানের বর্বরদের মধ্যে কি নিদারুণ বেদনার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবের। বাংলাকে ভালবেসে জীবনে যিনি সর্বদা যে কোন নির্যাতনকে এমন কি মৃত্যুকে পর্যন্ত মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত, বাংলার সেই সবচেয়ে দরদি সন্তান আজ একটি বাঙালীর মুখ দেখতে পারছেন না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি দেখছেন সেই হীনতম জানোয়ারগুলোর মুখ, যাদের স্মরণ করলেও আজ প্রত্যেকটি