পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

249 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হাজার বাড়ি তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আত্মসমর্পণ করবার প্রাক্কালে বাংলাদেশের ব্যাঙ্কগুলো লুট করে সমস্ত টাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা লাভের পূর্বে সমগ্র পাকিস্তানের Gold Reserve রাখা হতো করাচী ষ্টেট ব্যাঙ্কে। বাংলাদেশের ব্যাঙ্কে কোন স্বর্ণ রক্ষিত হতো না। এর অবশ্যম্ভাবী ফল স্বরূপ সদ্যজাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্য এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। যে কোন দেশের অস্তিত্ব এবং সমৃদ্ধির জন্যে স্বর্ণের একান্ত প্রয়োজন। এই সমস্যার সমাধান শুধু ংলাদেশ সরকারের একার হাতে নিবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের যে সাড়ে সাত কোটি জনতা তাদের অতুলনীয় দেশপ্রেম এবং নিষ্ঠার দ্বারা বাংলার মুক্তি অর্জন করলো, সেই সাড়ে সাত কোটি জনতাকেই আজ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ কঠিন সমস্যার সমাধানে অগ্রসর করবে। আর এ কথাও জানা যে, বাংলার সংগ্রামী জনতা এককণ্ঠে সেই দাবীর প্রতি জানাবে তাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা। প্রস্তুত সংগ্রামী বাংলার সংগ্রামী জনতা। জয় বাংলা। (গাজীউল হক রচিত) বাংলাদেশের পুনর্গঠন-৩ ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ধর্মের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে জাগতিক তথা রাজনৈতিক কাজে লাগানো হয়েছিল বলেই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান টেকিনি। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির পটভূমি ছিল ধর্ম। সাম্প্রদায়িকতা; কিন্তু বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ লক্ষ প্রাণের রক্তে অর্জিত হলো- তার সংগ্রামী পটভূমিতে যে সত্যটি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল তা হলো দেশপ্রেম। দেশের মাটির প্রতি দেশবাসীর ভালোবাসা- দেশের সংগ্রামী শাসনক্ষমতার সংগে দেশবাসীর প্রাণের মিলন। আজ স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি নবজাত রাষ্ট্রের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সামনে নতুন স্বপ্নের হাতছানি- কলপনার অজস্র বিস্তার। এদেশ কেমন হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুন্দর জবাব দিয়েছিলেন। আপনারা কিভাবে এ দেশকে গড়ে তুলতে চান- এর উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশ কেমন হবে। সত্যিই অনেক ধ্বংসস্তুপের মধ্যে মাথা তুলে যে নতুন রাষ্ট্র আজ এলোমেলো, এবড়োথেবড়ো, বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত হয়ে আছে তাকে আমাদের মনের মতো করে সাজাতে হবে- রূপায়িত করতে হবে আমাদের প্রতিটি স্বপ্নকে। এই স্বপ্নকে রূপায়িত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো নিষ্ঠা, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সহযোগী চেতনার। হানাদার বাহিনীর চলাচলের পথ দুর্গম করে তোলার জন্য একদিন যে পুল, কালভার্ট আমরা ভেঙে দিয়েছিলাম- আজ সেই পথেই আমাদের নিত্যদিনের যাত্রা। এই বাড়ির পাশের পুলটির পুনঃনির্মার্ণের জন্য আপনি কি সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবেন? নিশ্চয়ই নয়। আপনার কাজ হবে প্রাথমিকভাবে পার্শ্ববর্তী মানুষের মধ্যে এমন এক চেতনার জন্ম দেয়া- এমন এক নতুন কর্মপ্রেরণাকে সঞ্চারিত করা, যাতে শারীরিক সাধ্যের অন্তর্গত পরিশ্রমে দেশের যে কোনো পুনর্গঠন কাজে নিদ্বিধায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে। এ ভাঙা পুলটি আপনারাই পুনঃনির্মাণ করতে পারেন। অর্থের সংগে কর্মের নিষ্ঠা যুক্ত না হলে অপচয়কে রোধ করা যায় না।