পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

251 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ .....ծծԳծ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হয়নি। প্রথম প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি চক্রান্তের রাজনীতিতে আস্থাবান ছিলেন এবং তাঁর আমল থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তল্পিবাহকদের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও চক্রান্তের জাল বিস্তার পেতে তাকে। চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, গোলাম মোহাম্মদ, ইসকান্দার মির্জা, এরা সবাই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনুগত ভূত্য ছিলেন এবং চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গুপ্ত পথ বেয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি নিয়োগপত্র নিয়ে ক্ষমতায় আসেন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী। ক্ষমতায় পাঞ্জাবের মালিক ফিরোজ খান নূন করাচীর আই, আই, চুন্দ্রিগড় ও সেই একই চক্রান্তের সিড়ি বেয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। আইয়ুব খান ছিলেন বৃটিশ সামরিক বাহিনীর একজন পেশাদার সৈন্য। তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন সামরিক অভু্যত্থানের মাধ্যমে- একটি সামরিক ‘জুন্টার সহায়তায়। আইয়ুব খানের অনুচর কালাতের খান, মোনায়েম খান, সবুর এরাও কেউ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গদ্দীনসীন হননি। গত তেইশ বছরের ইতিহাস হচ্ছে গুটিকয়েক ক্ষমতালি সু, কায়েমী স্বার্থবাদী, আমলা মুৎসুদি, সামন্তপ্ৰভু, ধনপতি, সাম্রাজ্যবাদের পদলেহী, সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থশিকারীদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। যেহেতু চক্রান্ত, দলাদলি ও ষড়যন্ত্রের পঙ্কিলতার মধ্যে এই শাসকগোষ্ঠীর জন্ম, লালন-পালন ও মৃত্যু সেহেতু ওই তিনটি প্রক্রিয়ার প্রতিই তারা আস্থাবান ছিলেন। জনগণের কথা তাঁরা ভাবতেন না, কিম্বা ভাববার অবসর পেতেন না। জনগণের কোনো তোয়াক্কা তাঁরা করতেন না। জনগণের আশা-আকাংক্ষা, তাঁদের চাওয়াপাওয়া আর দাবী-দাওয়ার প্রতি সব সময় এক নিদারুণ নিস্পৃহতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন এই শাসকচক্র। তাই এই গণবিমুখ শাসকচক্রের হাতে পড়ে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এক দুঃসহ সময় অতিবাহিত করেছে গত তেইশ বছর ধরে। ধনীরা আরো ধনী হয়েছে। গরীবের দল আরো গরীব হয়ে গেছে। যেহেতু এই শাসকচক্র পাঞ্জাবী ভূস্বামী, পাঞ্জাবী ধনপতি, পাঞ্জাবী আমলা-মুৎসুদি ও পাঞ্জাবী সামরিক জুন্টার দ্বারাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, সেহেতু পাকিস্তানের বাকি চারটি প্রদেশ, পূর্ববাংলা, বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশের সাধারণ মানুষ এই শাসকচক্রের হাতে আরো বেশি লাঞ্ছিত, নিগৃহীত ও শোষিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়েছে পূর্ববাংলা ও পূর্ববাংলার মানুষ। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ছাপ্পান্ন ভাগ অধ্যুষিত পূর্ববাংলা এই শাসক চক্রের হাতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের আয়-করা বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসত পূর্ববাংলা থেকে, তবু পূর্ববাংলাকে তার আয়ের সিকি ভাগও ভোগ করতে দেওয়া হতো না। সব তারা ব্যয় করত পশ্চিম পাকিস্তানে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে কলকারখানা তৈরীর কাজে। যদিও কেন্দ্রীয় পাক সরকারের আয়ের শতকরা সত্তর ভাগ আসত পূর্ববাংলা থেকে, তবুও শিক্ষা খাতে পশ্চিম