পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

257 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৯। স্বাধীন বাংলা বেতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র- সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৭১ কেন্দ্র প্রচারিত রণাঙ্গন সম্পর্কিত এর দলিলপত্র কয়েকটি কথিকা দখলীকৃত এলাকা ঘুরে এলাম ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এক মুজিবনগরে এসেছিলাম প্রায় দু’মাস আগে। তাই এ দু’মাস শুধু পরের মুখেই শুনেছি দেশের দখলীকৃত এলাকার কথা শুনেছি পশ্চিম পাকিস্তানের জল্লাদ বাহিনীর গণহত্যা, নির্মম অত্যাচার, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের লোমহর্ষক কাহিনী। তাই, মনে মনে ভাবছিলাম একবার বাড়ি যাব। স্বচক্ষে দেখে আসব দেশের ও দশের অবস্থা। পারলে ওদেরকে একটু প্ৰবোধও দিয়ে আসব। আর বলে আসব তোমাদের মুক্তির দিন আগত প্রায়।’ কিন্তু যাবো বললেই ত যাওয়া হয় না। প্রথমত, আমি যে দায়িত্বে ন্যস্ত তা কার হাতে দিয়ে যাই। তার ব্যবস্থাও যখন করলাম তখন দেখা দিল নতুন ফ্যাসাদ। বন্ধু-বান্ধব ও হিতাকাংক্ষীদের দু’একজন ছাড়া সবাই নিষেধ করে বললেন, ‘গেলে আর ফিরে আসতে পারবেন না। ওরা পেলে আপনাকে গুলি করে মারবে।’ তবু সব উপেক্ষা করে একদিন রওয়ানা দিলাম, অতি ভোরে। হাঁটতে হাঁটতে সকাল ১১টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছলাম মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। বন-জঙ্গল ও গাছপালার ঘেরা একটা ছোট্ট গ্রাম। তারই মধ্যে একটা পোড়ো বাড়িতে এই ক্যাম্প। বাড়িটার চারদিকে এক মাইলের মধ্যে নেই আর কোন বাড়িঘর। তবে এলাকাটা এমন জনমানবহীন সব সময় ছিল না। সোনার বাংলাকে দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণে যারা শাশানে পরিণত করেছে, তাদেরই লেলিয়ে দেওয়া খুনী সৈন্যরা গত এপ্রিল মাসে সমগ্র এলাকাটিকে উজাড় করে দিয়েছে। বহু লোককে ওরা গুলি করে মেরেছে, প্রায় সমস্ত বাড়িঘর ওরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই এসবের পরও ক্যাম্পের কাছে যেতেই কে একজন হল্ট’ বলে চেচিয়ে উঠল। ডানে তাকিয়ে দেখি রাইফেল হাতে একজন তরণ। সম্ভবত কয়েক মাস আগে সে কোন কলেজে পড়ত। কাছে এসেই জিজ্ঞেস করল, আমি কে এবং কি জন্য ওখানে গিয়েছি। বললাম, আপনাদের কম্যাণ্ডার সাহেবের সাথে দেখা করব, ব্যক্তিগত প্রয়োজন আছে। সৈনিক আমাকে দাঁড়িয়ে রেখে আরেকজনকে ডেকে আনতে গেল, কয়েক কদম আগে। মধ্য-বয়সের দ্বিতীয় লোকটি কাছে এসে অতি বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন আমার পরিচয় এবং কম্যাণ্ডার সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাতের কি প্রয়োজন। তার প্রশ্নের যথাযথ জবাব দানের পর তিনি আমাকে একটা গাছের গোড়ায় বাঁশের চটায় তৈরী একটা বেঞ্চিতে বসতে বলে ভেতরে গেলেন। তারপর মিনিট খানেকের মধ্যে ফিরে এসে আমাকে কম্যাণ্ডার সাহেবের কাছে নিয়ে গেলেন। র্যাঙ্ক তার ক্যাপ্টেন বটে, কিন্তু তিনি হলেন ঐ ক্যাম্পের সর্বাধিনায়ক। আমাদের তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে যুদ্ধ করছেন তারই নির্দেশে। সারাদিন সারারাত বসে বসে তিনি খবরাখবর নেন শত্রর