পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

260 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সুবেদার মেজরের সাথে কথা বলার সময় সেখানে এসে হাজির হলেন একজন তরুণ পূর্বতন সি-এস-পি অফিসার। কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন কোন এক মহকুমার প্রশাসক। পরনে লুঙ্গি, গায়ে একটা হাফশার্ট, পায়ে একজোড়া সাধারণ স্যাণ্ডেল। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার এ অবস্থা কেন? জবাবে জানালেন, ‘এর চেয়ে বেশী যোগাড় করাও সম্ভব নয়। তদুপরি, আমার সহমুক্তিযোদ্ধারা যেখানে এক-কাপড়, এক-জামায় দিন কাটাচ্ছেন সেখানে কারো পক্ষে কি বিলাসিতা শোভা পায়?” ভদ্রলোক চলে গেলে সুবেদার মেজরের কাছে সব শুনতে পেলাম। সাবেক মহকুমা প্রশাসক আজ একজন মুক্তিসেনা হিসাবে কাজ করছেন। আর দশজন যেখানে থাকেন, যা খান- তিনিও সেভাবে থাকেন, খান। এসব শুনে ভাবতে আমি অন্যমনস্ক হয়ে পরলাম। সুবেদার মেজর কিছুক্ষণ পর বললেনঃ এত কি ভাবছেন? সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম, ভাবছিলাম ওই ভদ্রলোকের কথা। একটি মহকুমার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন তিনি মাত্র সেদিনও। আমরা যারা যুদ্ধ করি, সাংবাদিকতা করি অথবা যারা রাজনীতি করেন তারা ত বিপদ-আপদের ঝুঁকি নিয়েই ওসব পেশা গ্রহণ করেছিলাম। শেখ সাহেবের যে বিচার প্রহসন হতে পারে তা তিনি নিজেও জানতেন। কিন্তু এরা? এরা ত ছিলেন পাকিস্তান সরকারের সর্বাপেক্ষা অনুগৃহীত কর্মচারী। রাজনীতি ছিল এদের জন্য নিষিদ্ধ। এরা ইচ্ছে করলে মুক্তিযুদ্ধ থেকে দূরে সরে থাকতে পারতেন। কিন্তু এরা নিজেদের আলাদাভাবে ভাবতে পারেননি। ভেবেছেন জাতির একজন হিসাবে। তাই জাতীয় দায়িত্ব হিসাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মুক্তিসংগ্রামে। সত্য বলতে কি, এই দায়িত্ববোধের আদর্শই বর্তমান মুক্তিসংগ্রামের সবচেয়ে মূল্যবান পাথেয়। তিন ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প থেকে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে। বেলা তখন সাড়ে ১২টা। পথ রয়েছে ২২ মাইল। অথচ সোজাপথে গেলে এ দূরত্ব অর্ধেকে হ্রাস করা সম্ভব ছিল। যাত্রার সময় সুবেদার মেজর আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন সামনের কতিপয় এলাকা সম্পর্কে। কেননা ঐ এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও শত্রপক্ষ তখন সক্রিয় ছিল। তবে তিনি আমার সাথে একজন গাইডও দিয়েছিলেন যাতে আমার কোন অসুবিধা না হয়। মাঠ-ঘাট পেরিয়ে মাইল তিনেক যাওয়ার পর আমরা একটা জঙ্গলে গিয়ে হাজির হলাম। চারদিকে তাকিয়ে আমি জঙ্গল আর জঙ্গল ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না। মাত্র মিনিট তিনেক সময়ের ব্যবধান। তারপরই ১৮-১৯ বছরের এক যুবককে সাথে নিয়ে আসলেন। আমাকে নিয়ে রওনা হলো সেই তরুণ সঙ্গী। আমরা দুজন চলছি। তরুণ চললো আগে আগে, আমি তার পেছনে পেছনে। তরুণকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্র। এখন মুক্তিবাহিনীতে কাজ করছে। যশোর জেলায় তার বাড়ি। বহু আগেই বাবা মারা গেছেন। বাড়িতে ছিলো বিধবা মা আর ভাইবোন। গত এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী সৈন্যরা তার কলেজে পড়া বোনকে ধরে নিয়ে যায়। ছোটভাই তাতে বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যা করে। অবশ্য পরে ছোট বোনটিকেও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, বাড়ি থেকে দূরে। এই খবর পেয়ে সে যখন বাড়ি গিয়েছিলো তার