পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

264 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হয়েছে তার আশেপাশে কোথাও হয়তো মুক্তিবাহিনী লুকিয়ে আছে- এ ভয়েই পাঞ্জাবী সৈন্যরা ঘটনাস্থলের তিন মাইল দূর থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। যাহোক, সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা অবিরাম গোলাবর্ষণ করে কম্পিত শত্রর উদ্দেশে। তারপর রাস্তার দু’পাশে ও সামনে গোলাগুলি ছড়তে ছুড়তে তারা এগিয়ে এল ঘটনাস্থলে। এতে প্রায় আরও ১ ঘণ্টা সময়। পতাকাটা তখনও সগৌরবে দাঁড়িয়ে থেকে পতপত করে করে মুক্তির গান গাইছিল। কিন্তু মানবতার দুশসন পাঞ্জাবী সৈন্যরা তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুজি করেও কোন মুক্তিসেনাকে জীবন্ত বা মৃত খুঁজে পেলনা। কিন্তু তবুও ক্যান্টানমেন্ট গিয়ে যে নিজেদের বীরত্বের কাহিনী ঢাকায় নিয়াজীর কাছে পাঠাতে হবে- তাই তারা কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৪ঘন্টা সময়ে শুধু মাত্র কল্পিত শত্রর উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা যে কত হাজার রাউণ্ড গোলা-গুলি অপচয় করেছে এবং তার মূল্যই বা কত হাজার বা কত লাখ টাকা তা কেবল সামরিক বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারেন। কিন্তু আমার মনে যে প্রশ্নটা দেখা দিয়েছে তা হল নিজেদের টাকায় কিনতে হলে অথবা অন্যের কাছ থেকে না পেলে কি পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তা এমনভাবে গোলাগুলির অপচয় করতে পারত? জবাবও আমি নিজের কাছ থেকে পেয়েছি। নিশ্চয়ই তারা এমনটা পারত না। হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছে। বাংলাদেশ থেকে তাদেরকে দুদিন আগে বা পরে তল্পীতলপা গুটিয়ে যেতে হবে। সেদিন হয়ত বর্তমান জান্তা ক্ষমতায় থাকবে না- যেমন নাই আইয়ুব ভুট্টোর চক্র। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষকে যে এ টাকা সুদে আসলেই শোধ করতে হবে। বাংলাদেশের সোনালী সূত্র-পাট বেচা টাকা ছাড়া যে এ কাজ কত দুঃ সাধ্য হবে তা আমরা যেমন জানি, তারাও তেমনি জানে। তার প্রমাণ ইতি মধ্যেই মিলেছে। যুদ্ধের তিন মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই সামরিক জান্তাকে সমস্ত লাজলজ্জার মাথা খেয়ে ঋণের কিস্তি পারিশোধের ব্যাপারে নিজেদের অপারগতার কথা ঘোষণা করতে হয়েছে। নতুন ঋণের জন্য নাকে খৎ দিতে হয়েছে বিভিন্ন দেশে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ধর্ণা দিতে হয়েছে রাজধানীতে রাজধানীতে। সুতরাং যুদ্ধ বেশী দিন স্থায়ী হলে তাদের পক্ষ নিজেদের সগৌরবে দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।... (মতিন আহমেদ চৌধুরী রচিত) মুক্তিযুদ্ধ কোন পথে ৪ অক্টোবর, ১৯৭১ ংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ছমাস পূর্তি হয়েছে গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর তারিখে। এই ছমাসে মুক্তিযুদ্ধ কতটা এগিয়েছে তার খতিয়ান নিতে গেলে দেখা যাবে আমাদের হতাশ হবার কিছু নেই। বরং বাংলাদেশের বর্ষণমুক্ত শারদ আকাশের মতই বাংলার মুক্তিযুদ্ধও এক সফল ও প্রসন্ন প্রভাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পথ আমাদের দুর্গম। যাত্রাপথও বিপদসঙ্কুল। তবুও এই যাত্রাশেষে স্বাধীনতা ও মুক্তির সোনালী উষা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, এই দৃঢ়বিশ্বাসে আজ আমাদের বুক ভরে উঠছে। গত ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ