পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

276 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড না- অথচ লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর ঠোঁট দুটাে তখনও নড়ছে। আমার যেন মনে হলো বৃদ্ধা মণির মায়ের নির্মিত হোচ্ছে। (মুসা সাদেক রচিত) মুক্তাঞ্চলে ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ! আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশ আজ স্বীকৃত সত্য। বাংলাদেশ আজ প্রতিটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের আর্তি, বাংলাদেশ আজ সকলের হৃদপিণ্ডের শব্দ হয়ে বাজবে। আমাদের প্রাত্যহিক কাজে, চিন্তায়, স্বপ্নে, জাগরণে সুষুপ্তিতে বাংলাদেশ অবিশ্রাম ধ্বনিত হচ্ছে। আমাদের ভালোবাসায়, বাঙালীর প্রতি মুহুর্তের উদ্বেগ, চিন্তা-অনুরাগে, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের সহানুভূতিতে বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। কিন্তু শক্র এখনো বাংলাদেশে আছে। শত শত শত্র আত্মসমর্পণ করছে, অনেকে আবার আত্মসমপর্ণ না করে পালাতে গিয়ে মরছে- মৃত্যু তাদের জন্য নির্ধারিত। এতোদিনের অত্যাচার আজ সমাহিত হওয়ার কালে, অস্ত্র তাদের দিকে উদ্যত হয়েছে, ইতিহাসের এই অমোঘ নিয়ম। তাই শত্রসৈন্যের পরাজয় এতো দ্রুত, এতো করুণ। কিন্তু পলায়নের পর কি চিহ্ন আমরা পাচ্ছি অতীতের বাংলাদেশের? ছোট-বড় শতেকের মতো শহরে, ৬০ হাজার গ্রামে তারা কি স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে? মিত্ৰশক্তির সহায়তায় মুক্তিবাহিনী একের পর এক গ্রাম ও শহর দখল করে এগিয়ে চলেছে এবং যেখানেই তারা যাচ্ছেন দেখতে পাচ্ছেন শুধু ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস। যেন মানবসভ্যতার শক্রচেঙ্গিশ খাঁর দলিত জনপদ ও গ্রাম, যেন নাৎসী বাহিনীর অত্যাচারে বিক্ষত কোন গ্রাম বা শহরের ওপর দিয়ে পথ চলা- যেন এক অচেনা জগতের পথে, কোন ঝঞ্চাহত গ্রামের ওপর দিয়ে। বাংলার চিরপরিচিত গ্রাম, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, যেদিকে চোখ ফেরাই শুধু ধূ ধূ করে হাওয়া। পরিচিত যশোরের সঙ্গে জনগণের মনে যে কি উল্লাস! তারা আবার সেই হারানো শক্তি ফিরে পাচ্ছে। দুহাত বাড়িয়ে তারা জানাচ্ছে সাদর সম্ভাষণ। বুকের থেকে একটি বিরাট পাথরের বোঝা নেমে গিয়ে তারা পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। যেখানে সেখানে পথে পথে ধ্বংসের ছবি লাফিয়ে উঠছে। শত্রর অত্যাচারের কাহিনী। লজ্জা ক্ষোভ প্রকাশ বুক, স্বজন পরিজন হারানোর ব্যথা, সম্পদ হারানোর দুঃখ, গৃহহীন মানুষের অসহায় কান্না- কিন্তু মুক্তির নিঃশ্বাস টেনে, দুচোখ মেলে বলছে আর গান গাইছে- সাড়ে সাত কোটি নিপীড়িত মানুষের জয়। কোথাও পথের ওপর দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ছে পাগল একটি মানুষ। খবর নিয়ে জানা গেলো কিছুদিন আগেও সে ছিলো একজন বেসরকারী অফিসের অধস্তন চাকুরে। শত্রসৈন্যরা তার পিতা-মাতা সকলকে হত্যা করেছে এবং সে হয়ে গেছে পাগল। মুক্তিবাহিনী থেকে খবর জানতে চাইলো তার, কিন্তু হায়, তার আর পূর্বের সেই সুখের বা দুঃখের স্মৃতি স্মরণে নেই। মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের চোখে দুফোঁটা অশ্রু বেয়ে পড়লো, মিত্র বাহিনীর জওয়ানরা সহানুভূতি জানালো। তারা এগিয়ে চললো। তাদের হাতে অনেক কাজ। আরব্ধ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে। পেছনে যারা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে আসছে তাদের