পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

284 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ভিতর দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিপদ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করো। মনে রাখবা, সৎপথ ও ন্যায়নীতির ভিতর থেকে ধৈর্য সহকারে ঐ সমস্ত বিপদের মোকাবিলা করা এবং এ সমস্ত দুর্যোগ যদি কোন অত্যাচারী লোকের দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে, তবে তাদের ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রাণপণে রুখে দাঁড়ানোর নামও আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ৷ অতঃপর আল্লাহতালা বলেছেনঃ যে সমস্ত লোক ঐ সমস্ত বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর এই সমাধানের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং কোন অন্যায় কাজে লিপ্ত না হয়ে সৎ ও ন্যায়নীতির ভিতর থেকে জেহাদের মাধ্যমে ঐ সমস্ত বিপদের মোকাবিলা করে, আর ঐ কথা বলে- আমরা আল্লাহরই সিদ্ধান্তের উপর রাজী রয়েছি এবং তাঁরই কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তাদেরকে আমার বেহেস্তের শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও। কোরান শরীফের এই আয়াতের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ২৫শে মার্চ থেকে নরঘাতক জল্লাদ ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে যে গণহত্যা ও পাশবিকতা চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে এদেশের জনগণের উপর যে ভয়াবহ ও দুর্বিষহ বিপদ নেমে এসেছে, এগুলোও মানুষের উপর আল্লাহতালার বিরাট পরীক্ষা। এই কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় অবশ্যই আমাদেরকে উত্তীর্ণ হতে হবে। এবং সেজন্য প্রয়োজন হচ্ছে অসীম সহনশীলতা ও ধৈর্যের সাথে জেহাদ করে যাওয়া। এই বিপদের দিনে অবশ্যই আমাদেরকে ন্যায়-নীতি মেনে চলতে হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিপদ কাটিয়ে ওঠার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। অক্টোবর, ১৯৭১ । তৃতীয় ও শেষ অংশ। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকগোষ্ঠী বিগত ২৪ বৎসর যাবৎ শুধু বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকেই বঞ্চিত করে নাই, উপরন্তু এদেশের জনগণের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের ন্যায্য অধিকার চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার হীন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে বিগত ২৫শে মার্চ থেকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। তারা হিংস্র পশুর ন্যায় বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, ঘর-বাড়ি, ধন-দৌলত, দোকান-পাট লুট করছে ও জুলিয়ে দিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, প্রায় এক কোটি লোককে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে ও তিন কোটি লোককে নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়া করেছে এবং বলপূর্বক এদেশের মানুষকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে ও তাদের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ওরা আমাদের সাথে যে ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, তা হচ্ছে ন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করার যুদ্ধ। কোরানের দৃষ্টিতে ওরা শয়তানের বন্ধু এবং দোযখী। অতএব আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহতালা আরও বলেছেনঃ ومن يقتل مؤمنا متعمدا فجزائه جهنم ه অর্থাৎ, সুপরিকল্পিতভাবে যদি কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে হত্যা করে তবে এর একমাত্র বদলা হচ্ছে দোযখ। এমনকি কোন অমুসলমানকেও যদি অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় তবে তার জন্যেও একই শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। দোযখীদের সাহায্য করাও দোযখের কাজের মধ্যে গণ্য। আল্লাহতালা বলেছেন, আমার বান্দা যত বড় গোনাহ বা অন্যায়ই করুক না কেন, সে তার অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যদি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তা আমি মার্জনা করে দেব। কিন্তু কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, অন্যায়ভাবে অন্যের অধিকার নষ্ট করে, অন্যের অধিকারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, অপরের মনে কষ্ট দেয় ও নারীর অমর্যাদা করে সে আমার যত এবাদত বন্দেগীই করুক না কেন আর যত ক্ষমাই চাক না কেন, তাকে ক্ষমা করার কোন অধিকার আমার নেই। তাকে একমাত্র ক্ষমা সে-ই করতে পারে, যার সঙ্গে সে এহেন আচরণ করলো। রাসূলুল্লাহ