পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

300 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দূর গায়ের এই পরিত্যক্ত জলাশয়ে সে লুকিয়ে থেকেছে সারাটা দিন এবং সমস্ত সন্ধ্যে। কারণ, গানবোটের আওয়াজ মনে হয়েছে কখনো দূরে, আবার কখনও খুব কাছে। রাইফেল, মেশিনগানের আওয়াজ ভেসে এসেছে অনেক বার। এখন, এই বিবর্ণ শেষরাতে ঘাসের ওপর শুয়ে আছে মানুষটি, যার নাম জীবন, আর যার জীবন এক অন্তহীন অর্থহীন যন্ত্রণার উপাখ্যানে পরিণত। সব হারিয়েও আমি এক অন্ধকারের জন্তুর মত পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমার বিষে নীল হয়ে যাওয়া পদ্মপাতার জীবনকে বাঁচাতে এ কি এক হাস্যকর প্রহসন,এলোমেলো ভাবনারা ঘুরেফিরে আসে। এই মুহুর্তে, নিজের ওপর প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ হতে লোকটি আবিস্কার করে- আজন্মের অন্তরঙ্গ মৃত্যুভয় অকস্মাৎ অপসারিত। তার এখন মরতে কোন ভয় নেই, ভয় নেই সেই সব হিংস্র ঘাতকদের মুখোমুখি দাঁড়াতে। আমি প্রতিশোধ নিতে চাই, সারা শরীরে মাখতে চাই আমার সন্তান-হত্যার রক্ত, একটি অমোঘ প্রতিজ্ঞা ক্রমশ ওকে জড়িয়ে ধরছে নিবিড় করে। অতএব, আমি ফিরে যাব। একটি আশ্চর্য সিদ্ধান্তে নিজেই অবাক হল জীবন। এখন, ভোররাতের আবছা অন্ধকার গায়ে মেখে, একটি মাত্ৰ কামনা করে হঠাৎ ঋজু হয়ে বসা মানুষটিঅস্ত্র চাই, একটি অমোঘ শাণিত অস্ত্র, যা দিয়ে নিষ্ঠুর আঘাত হানতে পারি আমার সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হার্মাদদের ওপর। হঠাৎ জীবনের স্মৃতিতে তার ফেলে আসা বাড়িটি একটি ছায়াছবির দৃশ্য হয়ে ভেসে ওঠে। শোবার ঘর, রান্নাঘর, উঠোন। তারপর ধানের গোলার নীচে এসে থমকে দাঁড়ায় যেন ক্যামেরার চোখ। ওই তো স্পষ্ট চোখে পড়ছে- তীক্ষ্ণধার অস্ত্রটিকে, বিকেলের সূর্যালোক তার অবয়বে প্রতিফলিত। ফেলে আসা বাড়িটি এক দুর্বার আকর্ষণে ডাকছে জীবনকে। চুম্বকের মত আকর্ষণ করছে গোলার নীচে কাটপাতার তলে লুকিয়ে রাখা হঠাৎ বিপদের অবলম্বন সেই চকচকে ফলার বর্শাটি। আমি এখন বাড়ি যাব। শেষরাতের হালকা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাব- বিড় বিড় করে নিজেকে শোনায় জীবন। আর তখন সে স্পষ্ট শুনতে পেল- একটি চার বছরের কচি ছেলে তার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলছে, শোধ নেবে না বাবা? উঠে দাঁড়ায় জীবন। শোধ নেবে সে। সব মৃত্যুর প্রতিশোধ। (অসিত রায় চৌধুরী রচিত) আজকের বাংলায় ১৬ অক্টোবর, ১৯৭১ ঘাট থেকে ফিরে এলো গোলাপজান। তার কোলের বাচ্চাটার নোংরা কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিয়ে উঠোনে সেগুলো একটা বাঁশের ওপর মেলে দিতে দিতে সে লক্ষ্য করলো- কলিমুদ্দিন তার ফেরীতে যাবার সরঞ্জামগুলো